গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
এক মাস আগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার প্রয়োজন প্রসঙ্গে কিছুটা কটাক্ষের সুরেই বলেছিলেন, ‘‘বাংলা বরং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের থেকে কয়েকটা বুলডোজ়ার ভাড়া করে নিয়ে আসুক।’’ এক মাস পর দেখা গেল বিচারপতির ‘পরামর্শ’ কাজে লাগিয়েছে মুর্শিদাবাদ। জেলার সদর শহর বহরমপুরের রাস্তায় বেআইনি নির্মাণ সরাতে ‘অপারেশন বুলডোজ়ার’ চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, বাংলায় বুলডোজ়ারের রাজনীতি চলবে না। কারণ, এটা বাংলার নীতি নয়। ক্ষতিপূরণ ছাড়া এ রাজ্যে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না। নবাবের জেলা মুর্শিদাবাদের শহর কি তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করল?
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বহরমপুরের রাস্তায় যৌথ অভিযানে নেমেছিল জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং বহরমপুর পৌরসভা। বহরমপুরের জলট্যাঙ্ক মোড় থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। দুপুরে কেএন রোড, মোহনা বাসস্ট্যান্ড হয়ে পৌঁছেয় ওল্ড কান্দি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। কোথায় ড্রেনের উপর স্ল্যাব পেতে বানানো দোকানঘর ভেঙে দেওয়া হয়, তো কোথাও উপড়ে ফেলা হয় সরকারি সম্পত্তির উপর তৈরি করা বেআইনি কংক্রিটের নির্মাণ। রাস্তা দখল করে তৈরি অস্থায়ী দোকানঘরও ভেঙে ফেলা হয় ‘অপারেশন বুলডোজ়ারে’। খবর পেয়ে দোকানদারেরা ছুটে আসেন। প্রতিবাদ জানান। অন্য দিকে, বহরমপুরের সাধারণ মানুষকে দেখা যায় অপারেশন বুলডোজ়ারে উৎসাহ জোগাতে। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘অপারেশন বুলডোজ়ারে আমরা খুশি। রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যেত না ওই বেআইনি দোকানের জন্য। বহু বার বড় দুর্ঘটনা ঘটতে ঘটতে বেঁচে গিয়েছে এর জন্য।’’ কিন্তু দোকানদারদের ভবিষ্যৎ কী হবে? মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো, কি তাদের পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা হয়েছে?
বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে জেলা সদর মহকুমা শাসক প্রভাত চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি পুনর্বাসন প্রসঙ্গে কিছু জানাননি। তবে বলেছেন, ‘‘অনেকেই ড্রেন দখল করে স্ল্যাব বসিয়ে ব্যবসা করছেন। কেউ আবার সরকারি জায়গায় বসিয়ে নিয়েছেন লোহার রেলিং। সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার জন্য ফুটপাত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ফুটপাত চলে গিয়েছিল ব্যবসাদারদের দখলে। ফলে প্রতি দিন ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় তৈরি হচ্ছিল তীব্র যানজট। রাস্তার জল ড্রেনে নামছিল না। বৃষ্টি হলেই জল জমছিল রাস্তায়। পুজোর আগে তাই শহরকে যানজট মুক্ত করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হল।’’
মুর্শিদাবাদে অবশ্য ‘অপারেশন বুলডোজ়ার’ এই প্রথম নয়। এর আগেও দু’বার কান্দি এবং ভরতপুরে বুলডোজ়ারের সাহায্য নিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বড় বড় বেআইনি নির্মাণ। ভরতপুরে বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার কার্যালয় ভাঙা হয়েছিল বুলডোজ়ারে। আবার কান্দিতে পুরসভার নিজস্ব এলাকায় বেআইনি ভাবে তৈরি দোকানঘর ভাঙতে বুলডোজ়ার ব্যবহার করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। মাস কয়েক আগেই ঘটে সেই ঘটনা। তবে দু’ক্ষেত্রেই ওই কাজ করা হয়েছিল হাই কোর্টের নির্দেশে। এ বার অবশ্য তেমন কোনও নির্দেশ নেই। মুর্শিদাবাদের স্থানীয় প্রশাসন নিজেরা ‘অপারেশন বুলডোজ়ার’-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ভুলে গেলেন তাঁরা। না কি সত্যি সত্যিই বিচারপতির পরামর্শে যোগীর বুলডোজ়ারটি ভাড়া নিল নবাবের জেলা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy