—ফাইল চিত্র।
লড়াইটা তৃণমূল বনাম বিজেপি।
বাম-কংগ্রেস জোট ভোট কেটে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু করিমপুর জেতার আশা বোধহয় তারা নিজেরাও করে না।
আরও নির্দিষ্ট করে বললে, লড়াইটা মহুয়া মৈত্র বনাম বিজেপি।
কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সভায় মানস ভুঁইয়াকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা উঠলে করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক বলে এসেছিলেন, এই ভোট তাঁরা নিজেরাই দেখে নিতে পারবেন। তাই জেতার কৃতিত্ব বা হারার দায় তাঁর উপরেই সরাসরি বর্তাবে। তৃণমূলের হয়ে প্রচারে ববি হাকিম বা ব্রাত্য বসুরা এক-আধ দিন আসছেন ঠিকই। কিন্তু বিজেপি যেখানে নেতা-অভিনেতাদের পুরো ফৌজ নামিয়েছে, তৃণমূলের চক্রব্যূহ আবর্তিত হচ্ছে মহুয়াকে ঘিরেই।
এবং আরও নির্দিষ্ট করে বললে, লড়াইটা মহুয়া মৈত্র বনাম মুকুল রায়। মর্যাদার লড়াই।
বিজেপির হয়ে প্রচারে এসেছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এসেছেন ফ্যাশন ডিজ়াইনার অগ্নিমিত্রা পাল থেকে টালিগঞ্জের অভিনেতা রিমঝিম মিত্র। তৃণমূলের নিতান্ত সাদামাটা প্রার্থীর তুলনায় বিজেপির প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার রীতিমতো ‘হেভিওয়েট’, দলের রাজ্য সহ-সভাপতি তিনি। তার পরেও কিন্তু টিম-বিজেপির অঘোষিত ক্যাপ্টেন মুকুলই, তৃণমূলের হয়ে দীর্ঘ দিন নদিয়ার দায়িত্বে থাকার সুবাদে এই তল্লাট যাঁর হাতের তালুর মতো চেনা, আনাচে-কানাচে যাঁর ‘কাছের লোক’ ছড়ানো বলে জনশ্রুতি।
ঘটনা হল, লোকসভা নির্বাচনে যা লিডই পেয়ে থাক তৃণমূল, এ বারের লড়াই কঠিন হতে চলেছে বলে দলের নেতারাই ঠারেঠোরে স্বীকার করছেন। তার বড় কারণ ধর্মীয় মেরুকরণ, যার জেরে জোটের পাশাপাশি তৃণমূলের হাত থেকেও হিন্দু ভোট চলে আসতে পারে বিজেপির ঝুলিতে।
দ্বিতীয় কারণ, তিন প্রার্থীর মধ্যে এক মাত্র জোটের প্রার্থীই মুসলিম। করিমপুরে ভাল পরিমাণ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে, যার বেশির ভাগটাই এত দিন ছিল তৃণমূলের হাতে। এখন মেরুকরণের চোটে যদি তার একটা অংশ সংখ্যালঘু জোটপ্রার্থীর দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাতে আখের রক্তক্ষরণ হবে তৃণমূলের। যে কারণে দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা ফিরহাদ ওরফে ববি হাকিমও প্রচারে এসে জোটকেই বেশি আক্রমণ করেছেন, সিপিএমই বিজেপিকে জিতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। এক মাত্র এনআরসি-আতঙ্ক যদি সীমান্ত লাগোয়া এই জেলায় ভোটারদের বিজেপির থেকে দূরে না ঠেলে, গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ১৪ হাজার ভোটে লিড খাতের কিনারে গিয়ে দাঁড়াতেই পারে।
আর আগামী সোমবার এই ‘পানিপথে’ই মুখোমুখি হচ্ছেন দুই ক্যাপ্টেন— মুকুল আর মহুয়া।
মুকুল রায় তৃণমূলে থাকতে নদিয়া জেলাকে বলা হত তাঁর ‘দ্বিতীয় বাড়ি’। দক্ষ সংগঠক হিসেবে অঘটন ঘটানোর নজির তাঁর ঝুলিতে কম নেই। তবে হাওয়ার বদলে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান যেমন বদলেছে, তেমনই পাল্টে গিয়েছে নদিয়ার সমীকরণও। সে দিন জেলা তৃণমূলের রাজনীতিতে কোথাও না থাকা মহুয়া এখন শুধু কৃষ্ণনগরের সাংসদ নন, তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি, এক কথায় সর্বময় কর্ত্রী। তাঁর কিছু কথা বা আচরণ পুরনো নেতাকর্মীদের একাংশকে দূরে ঠেলেছে ঠিকই। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে পরপর দু’বার— ২০১৬ সালে করিমপুরে এবং ২০১৯ সালে কৃষ্ণনগরে তিনি শক্ত লড়াই জিতে এসেছেন। এবং রেকর্ড বই তাঁকেও মুকুলের মতোই ‘অঘটনঘটনপটিয়সী’ হিসেবে মনে রাখতে পারে, বিশেষ করে যদি এ বার তিনি তাঁর ছেড়ে আসা গড় রক্ষা
করতে পারেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কলকাতার বৈঠকে মহুয়া দলনেত্রীকে বলেছিলেন, করিমপুরে বাইরের কাউকে পাঠানোর প্রয়োজন নেই, তাঁরাই দেখে নেবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সতর্কবার্তা ছিল— ‘ওভার-কনফিডেন্স’ ভাল না। ফলে এই নির্বাচন মহুয়ার কাছে নিজের আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করারও অগ্নিপরীক্ষা। এবং করিমপুরে হারলে তাঁর প্রতি বীতশ্রদ্ধ বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিদের একাংশ যে ফের ফুঁসে উঠবেন, তাতেও কোনও সন্দেহ নেই।
সে দিক থেকে মুকুলের বিশেষ কিছু হারানোর নেই। শুধু নিজেকে ফের প্রমাণ করা ছাড়া। বিজেপি সূত্রের খবর, করিমপুরের নির্বাচনে তাঁকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই অন্যেরা আসা-যাওয়া করলেও তিনি প্রায় প্রথম থেকে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন। যদিও মুকুলের দাবি, “আমরা সর্বত্র দলীয় ভাবে লড়াই করি। তা ছাড়া, করিমপুর নদিয়া জেলায় হলেও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। সে কারণে তৃণমূলে থাকার সময়েও আমি কোনও দিনই সে ভাবে এখানকার সংগঠন দেখিনি।”
মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি যথারীতি
ফোন ধরেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy