Advertisement
E-Paper

প্রকাশ্যে দলের সমালোচনা, জড়ান বহু বিতর্কে, মমতার ধমক খেয়েও দিদির ‘গুড বুকে’ই ছিলেন ইদ্রিস আলি

বিরোধীদের উদ্দেশে বেফাঁস মন্তব্য করে, দলীয় নেতৃত্বের প্রকাশ্য সমালোচনা করে বিতর্কের জড়িয়েছেন ইদ্রিস। তবে বিতর্ক সত্ত্বেও দল তাঁকে দিয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও দলীয় পদ।

Idris Ali in TMC and Mamata Banerjee’s good book amid many controversies

ইদ্রিস আলি। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৩১
Share
Save

একদা তাঁকে বলা হত ‘পাউরুটি ইদ্রিস’। পাউরুটি প্রস্তুতকারকদের ইউনিয়ন করতেন তিনি। আর পরিচিতদের মাঝেমধ্যে কেক বা স্বাস্থ্যবান পাউরুটি উপহার পাঠাতেন। সেখান থেকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যও। বিতর্কে বর্ণময় ছিলেন। খবরে থেকেছেন। খবরে থাকার আকাঙ্ক্ষাও ছিল। কিন্তু ইদ্রিস আলির পৃথিবী থেকে বিদায় খানিকটা নিশ্চুপেই ঘটল।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিতর্ক নিত্যসঙ্গী থেকেছে তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন সাংসদ ইদ্রিসের। তবে তার পরেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ‘সুনজর’ থেকে বঞ্চিত হননি প্রবীণ রাজনীতিক।

রাজনীতিতে যোগ দেওয়া ইস্তক বিতর্ক পিছু ছাড়েনি ইদ্রিসের। বিডিও-র দফতরে তাঁরই চেয়ারে বসে দলীয় সভা করা থেকে শুরু করে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকায় অঞ্চল সভাপতি পদ বিক্রির অভিযোগ এনে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ইদ্রিস। বিরোধী নেতাদের লাগামহীন মন্তব্য করে খেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ধমকও। সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের আগে মুর্শিদাবাদের আর এক বিধায়কের সঙ্গে ট্রেনে সফর করার সময়ে তাঁর কথোপকথন নিয়ে কালীঘাটের বৈঠকে তাঁকে তিরস্কার করেছিলেন মমতা। তবে বিতর্কের সঙ্গে ঘর করা ইদ্রিস মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেলেও কখনও দলের বিরাগভাজন হননি। বরং দল এবং প্রশাসনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন।

বাম জমানার শেষের দিকে ২০০৭ সালে কলকাতায় একটি ধর্মীয় সংগঠনের হয়ে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ উঠেছিল, মিছিলকারীরা অবাধে ভাঙচুর চালিয়েছে। ‘সন্ত্রাসের’ পরিবেশ তৈরি করতে ছুড়েছে পেট্রল বোমাও! আহত হয়েছিলেন একাধিক পুলিশকর্মী। তার জেরে গ্রেফতার করা হয়েছিল ‘অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি ফোরাম’-এর তৎকালীন রাজ্য সভাপতি ইদ্রিসকে।

কংগ্রেসকর্মী হিসাবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করা ইদ্রিস একদা সোমেন মিত্রের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। সোমেনের সঙ্গেই ২০০৯ সালে তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। তবে তার আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী, তদানীন্তন তৃণমূল নেত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল ইদ্রিসের। ২০০৭ সালের সেই মিছিল তো বটেই, সাম্প্রতিক অতীতে যে যে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ইদ্রিস, তাঁর প্রয়াণের পরে সেগুলি আরও বেশি করে আলোচিত হচ্ছে।

ভগবানগোলার তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিস মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নিয়ে এক তরুণ কংগ্রেস নেতার মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বই লিখে যদি কেউ অপপ্রচার করার চেষ্টা করে, তার বা তাদের হাত-পা কেটে নেওয়া হবে! জিভ কেটে নেওয়া হবে।’’ ইদ্রিস আরও বলেছিলেন, ‘‘অসভ্য বর্বর বিজেপি, জামা-খোলা কংগ্রেস অধীর চৌধুরী, দুধে-সোনা বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষেরা আবার যদি মিথ্যা ভাবে বই প্রচার করে, তাদের মুখমণ্ডলটা পাল্টে দেওয়া হবে।’’ ওই মন্তব্যের পরই মুখ্যমন্ত্রীর কড়া ধমক খেয়েছিলেন ইদ্রিস।

কিছুদিন আগে অঞ্চল সভাপতিদের নিয়ে ইদ্রিসের একটি সভা করার কথা ছিল তাঁর বাড়িতে। অন্য একটি সভায় তিনি ব্যস্ত থাকায় বহু ক্ষণ পর্যন্ত সভা শুরুই হয়নি। ক্ষিপ্ত কর্মী-সমর্থকেরা বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুর শুরু করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ছাড়াও তাঁর পাঠানো অঞ্চল সভাপতিদের তালিকা বাতিল করতে ব্লক সভাপতি প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন ইদ্রিস। তার জন্যও দলের কাছে কড়াভাষায় তিরষ্কৃত হতে হয়েছিল তাঁকে।

মুর্শিদাবাদেরই লালগোলার বিধায়ক আখরুজ্জামানের সঙ্গে ট্রেনে সফর করার সময়ে সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ঠিক আগে দলীয় সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওই আসনে হারের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ইদ্রিস। মুসলিম প্রার্থী না থাকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। পর দিন বৈঠকে দলনেত্রী মমতা ইদ্রিসের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘তুমি ভেবো না ভগবানগোলা থেকে ট্রেনে চেপে তুমি কী বলছ, সেটা কালীঘাটে পৌঁছয় না!’’

তবে বিতর্ক বাড়লেও দলে গুরুত্ব কমেনি তাঁর। দল তাঁকে দিয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও দলীয় পদ। জেলা জুড়ে সংখ্যালঘু মহলে জনপ্রিয়ও ছিলেন তিনি। কিন্তু খানিকটা নীরবেই প্রয়াণ ঘটল তাঁর। কোনও বিতর্ক ছাড়াই।

Death Controversy TMC Murshidabad

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।