Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Robbery in Ranaghat and Purulia

জোড়া ডাকাতি: দেড় মাস ঘরভাড়া, গয়নার অগ্রিম বুকিং, বড় সময় ধরে ছক কষেছিল বিহারের দুষ্কৃতীরা

ইতিমধ্যেই রানাঘাটের ঘটনায় সাত জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু পুরুলিয়ার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
পুরুলিয়া, নদিয়া শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ১২:৪৯
Share: Save:

দেড় মাস আগে দু’টি ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন পাঁচ অবাঙালি যুবক। অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া ছোট ছোট ঘুপচি ঘর। কল্যাণীর এই এলাকায় এ ধরনের ঘরে প্রায়ই থাকতে আসেন বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকে কাজ খুঁজতে আসা শ্রমিকেরা। সেই ঘরের জন্য অগ্রিম বাবদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ভাড়াটিয়ারা! আপত্তি তোলার কথা মনেই হয়নি বাড়িওয়ালার। মঙ্গলবার তাঁর টনক নড়ল বাড়িতে পুলিশ এসে হাজির হওয়ার পর। কল্যাণীর ওই বাড়িওয়ালা গোপাল শেঠ জানতে পারলেন, তাঁরই বাড়িতে বসে বড় ডাকাতির ছক কষেছিল বিহারের ‘দস্যু’রা।

মঙ্গলবার দুপুরে কল্যাণী থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে রানাঘাটে এবং প্রায় ছ’ঘণ্টার দূরত্বে পুরুলিয়ার দু’টি সোনা এবং হিরের গহনার দোকানে কয়েক কোটি টাকার ডাকাতি হয়। অদ্ভুত ভাবে দুই ঘটনাস্থলের ভৌগলিক দূরত্ব বেশি হলেও ঘটনাগত মিল কম নেই। দু’টি ডাকাতিই হয়েছে একই সংস্থার শোরুমে। একই সময়ে দু’জায়গায় হামলা চালিয়েছে ডাকাত দল। দুই ডাকাত দলের সদস্য সংখ্যা এবং ডাকাতির ধরণও একই রকমের। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে প্রতিটি দলেই সাত জন করে দুষ্কৃতী ছিল। তারা প্রত্যেকেই এসেছিল বিহার থেকে। কল্যাণীতে ডাকাত দলের ডেরা উদ্ধার করার পর পুলিশের অনুমান, রানাঘাটে যেমন ঘটনার দেড় মাস আগেই পৌঁছে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, পুরুলিয়াতেও তেমন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই বুধবার রানাঘাটে গ্রেফতার হওয়া দুষ্কৃতীদের জেরা করে পুরুলিয়া থেকে আসছে পুলিশের দল। জোড়া ডাকাতির তদন্তে নেমে পুলিশ ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে দু’টি ঘটনার সংযোগ থাকতেও পারে। দুই জেলাতেই সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ডাকাতির পরিকল্পনা সাজিয়েছিল বিহারের দুষ্কৃতীরা।

কল্যাণীর যে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা সেটি বি ব্লকের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘আপাত নিরীহ, কম কথা বলা, মুখচোরা স্বভাবের ওই যুবকদের দেখে একটু ‘অন্যরকম’ই লাগত । সকাল হলেই দু’টো বাইকে চড়ে বেরিয়ে পড়ত ওরা। ফিরত সন্ধে নামার পর। যাতায়াতের পথে চোখাচোখি হত না, তা নয়। কিন্তু প্রয়োজন না হলে ওরা পারতপক্ষে কথা বলত না কারও সঙ্গে। বাড়িতে থাকলেও সারাদিন থাকত ঘরের ভিতরেই।’’

ইতিমধ্যেই রানাঘাটের ঘটনায় সাত জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা, গত দেড় মাস ধরে বাইকে চেপে এলাকার ‘রেইকি’ করতে বেরতো এই ডাকাত দল। সারা দিন খোঁজ খবর করে ফিরত সন্ধ্যায়। তার পরে বসত তাদের পরিকল্পনা সাজানোর পর্ব। কল্যাণীর ওই ‘ঘুপচি’ ঘর দু’টির তল্লাশি করে বিহারের দু’টি পরিচয় পত্র এবং বেশ কিছু সিরিঞ্জ উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের ধারণা, ওই দুষ্কৃতীরা মাদক সেবনও করত। সিরিঞ্জগুলো ব্যবহার হত সেই কাজেই ।

তবে রানাঘাটের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত কিছুটা এগোলেও পুরুলিয়ার ঘটনায় এখনও দুষ্কৃতীদের নাগাল পায়নি পুলিশ। তবে দোকানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিবরণ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, পুরুলিয়ার ওই দোকানে ডাকাতির দু’দিন আগেও ক্রেতা সেজে এসেছিল ডাকাত দলের দুই সদস্য। দোকানের কর্মীরা জানিয়েছেন, একটি কানের দুলের অগ্রিম বুকিং করে গিয়েছিলেন দু’জন। মঙ্গলবারও তাঁরাই এসেছিলেন ক্রেতা সেজে বাকি দাম দিয়ে গয়নাটা নিয়ে যেতে। কিন্তু বিল মেটানোর সময় আসতেই হঠাৎ ঠান্ডা জলের বোতল আনার নামে একজন বেরিয়ে যান। পরে তাঁর সঙ্গেই ভিতরে আসেন বাকি পাঁচ দুষ্কৃতী।

পুরুলিয়ার ওই শোরুম থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকার গহনা নিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন দোকানের কর্মীরা। দুষ্কৃতীরা কর্মীদের রিভলভার দেখিয়ে বেঁধে রেখে ডাকাতি করে। যাওয়ার আগে নিয়ে যায় সিসি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভগুলিও। তবে দোকানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ না পেলেও দোকানের বাইরে রাস্তার ফুটেজ থেকে ডাকাতদলকে ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ। অগ্রিম বুকিংয়ের কথা জেনে পুলিশের ধারণা, পুরুলিয়ারও এই এলাকার কাছে পিঠে কোথাও ঘাঁটি গেড়েছিল ‘দস্যু দল’। তবে সেটা কোথায়, তার খোঁজে এলাকার চারপাশে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে যে সমস্ত জায়গায় বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় সেই সব জায়গাতে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy