বিতর্ক এই হোস্টেলকে ঘিরে। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি অর্থে তৈরি ছাত্রাবাস ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি স্কুলকে। কান্দি ব্লকের বহড়া আদর্শ বিদ্যাপীঠের এই ঘটনায় এলাকায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের থাকার জায়গা কী ভাবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়।
বহড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৫৪ সালে তৈরি হয়। এলাকার এই ‘নামী’ স্কুলে জেলার দূরবর্তী এলাকার অনেকেই ভর্তি হয়। দূরের পড়ুয়াদের থাকার জন্য স্কুলের পাশে প্রায় সাড়ে এগারো কাঠা জমিতে ‘শরৎস্মৃতি ছাত্রাবাস’ তৈরি হয়। ছাত্রাবাস তৈরিতে এগিয়ে আসেন ভরতপুরের তৎকালীন বিধায়ক তথা ওই গ্রামের বাসিন্দা গোলবদন ত্রিবেদী।
অভিযোগ, মাস কয়েক আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ত্রিবেদী পরিবার মিলে এই ছাত্রাবাস থেকে পড়ুয়াদের হঠিয়ে দেয়। মাসে মোটা টাকার বিনিময়ে ছাত্রাবাসটি ভাড়া দেওয়া হয় একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। এতেই ক্ষুব্ধ ওই এলাকার বাসিন্দারা। পড়ুয়াদের দাবি, “ভর্তি হওয়ার সময় হোস্টেলে থাকার জন্য ফি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখছি ওই ওই ছাত্রাবাসে আমাদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।’’
যদিও স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীনেন্দ্রমোহন ত্রিবেদী বলেন, “স্কুল, খেলার মাঠ এমনকী ছাত্রাবাস— সব কিছুই আদর্শ সোসাইটির নামে আছে। স্কুল শুধু ব্যবহার করতে পারে মাত্র। ওই সোসাইটিই ছাত্রাবাসটি ভাড়া দিয়েছে। তবে আমি ছাত্রাবাসটি ওই সোসাইটিকে হস্তান্তর করিনি।’’
ওই স্কুলে ভগবানগোলা, সালার, গোবরহাটি, বড়ঞার চৈৎপুর-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্ররা ভর্তি হয়। ছাত্রাবাসে রয়েছে এই আশায় দূরের পড়ুয়ারা এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ভর্তির পর পড়ুয়ারা দেখে, ছাত্রাবাসে চলছে শিশুদের ক্লাস। সালারের বাসিন্দা অভিরূপ রায় চৌধুরী বলেন, “৩০ কিলোমিটার দূরে স্কুল। রোজই পথ যাত্রায় ক্লান্ত হতে হচ্ছে। কান্দিতে মেসে থাকতে হচ্ছে। অথচ স্কুলের ছাত্রাবাসটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।’’
অবশ্য বিশেষ অনুমতি নিয়ে ওই ছাত্রাবাসে ভগবানগোলার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম-সহ তিনজন পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু তাদের দাবি, ওখানে থাকার কোনও পরিবেশ নেই। তার উপর কর্তৃপক্ষ কিছুদিনের মধ্যে অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অখিলেশ মণ্ডল বেশ কয়েক বছর আগে ওই ছাত্রাবাসে থাকতেন। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের বঞ্চিত করে অন্য কোনও সংস্থাকে বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে ভাড়া দেওয়া গর্হিত কাজ।
কান্দি পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক গোবিন্দ রায় ওই স্কুলের প্রশাসক। তিনি বলেন, “ওই ছাত্রাবাসটি স্কুলের অধীনেই ছিল। কিন্তু আদর্শ সোসাইটির কাছে হস্তান্তর হয়নি বলেই মনে হয়। প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধান্তে স্কুলের কোনও সম্পতি হস্তান্তর হয় না। ছাত্রাবাসটি সরকারি প্রতিষ্ঠান না হলেও স্কুলের অধীনেই আছে। কী কারণে বেসরকারি স্কুলকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
ওই সোসাইটির বর্তমান সদস্য আলোক ত্রিবেদী বলেন, “আমরা চাই স্কুলের ছাত্ররা ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করুক। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহুবার দাবি জানিয়েও ওই ছাত্রাবাসটির সংস্কার করা হয়নি। ওটা ছাত্রদের থাকার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কোনও পড়ুয়া ওখানে থাকে না। সন্ধ্যায় ওখানে অসামাজিক কাজকর্ম হত। তাই এলাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছাত্রাবাসটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কোনও ভাড়াও নেওয়া হয় না। ওই প্রতিষ্ঠানটি ছাত্রাবাসটি সংস্কার করে দিয়েছে।’’ যদিও ওই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির সম্পাদক অর্ণব ত্রিবেদী বলেন, “স্কুলের জন্য ছ’টি ঘর নিচ্ছি। আরও ছ’টি ঘর অবশিষ্ট থাকছে। সেখানে ছাত্ররা থাকুক। ওই স্কুলের শিক্ষক তথা কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের সুকান্ত ত্রিবেদী বলেন, “প্রাক্তন বিধায়ক বহড়ার স্কুলের জন্য ছাত্রাবাস তৈরি করেছিলেন। তাঁর স্বপ্নকে ভঙ্গ হতে দেব না। স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসটি বেসরকারি স্কুলকে ভাড়া দিয়ে গোলবদনবাবুকে ও তাঁর স্বপ্নকে অপমান করছে।” জেলার স্কুল পরিদর্শক পূরবী বিশ্বাসের দায়সারা বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy