Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Jagaddhatri Puja 2023

ঐতিহ্য, ইতিহাসে মোড়া দেবী-বন্দনার নানা রূপ

এই এলাকায় প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো একটি পীরের মাজার রয়েছে। তার পাশেই বসত হাট, যার থেকে এলাকার নামকরণ।

পীরের হাটপাড়া বারোয়ারির জগদ্ধাত্রী। শান্তিপুরে।

পীরের হাটপাড়া বারোয়ারির জগদ্ধাত্রী। শান্তিপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
 শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৯
Share: Save:

কোনও পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েকশো বছরের পুরনো ইতিহাস। কোথাও পূজিত হন মহিষাসুরমর্দিনী। কোথাও কালী। কোথাও জগদ্ধাত্রী। কোথাও বা ভোগে দেওয়া হয় চিংড়ি মালাইকারী, কোথাও কাঁচা ভোগ। সব মিলিয়ে, শান্তিপুরের জগদ্ধাত্রী পুজো সঙ্গে যেমন জড়িয়ে আছে প্রাচীন ঐতিহ্য, তেমনই তা সাক্ষী প্রাচীন ইতিহাসেরও।

শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজোর মধ্যে একটি ব্রহ্মশাসনের পুজো। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে চন্দ্রচূড় তর্কচূড়ামণির নাম। কথিত আছে, এক সময়ে এখানে ১০৮ জন ব্রাহ্মণকে বসবাসের জমি দিয়েছিলেন নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পৌত্র গিরিশচন্দ্র রায়। তাঁদেরই এক জন ছিলেন চন্দ্রচূড়। ব্রহ্মশাসনে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করতেন তিনি। কথিত আছে, সেখানেই ধ্যানমগ্ন অবস্থায়ই এক দিন দেবীর দর্শন পান। যে রূপে তিনি দেবীকে দেখেছিলেন, সেই রূপেই এখানে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা। তা-ও প্রায় ২০০ বছর আগে।

রয়েছে পীরের হাট বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজো। এই এলাকায় প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো একটি পীরের মাজার রয়েছে। তার পাশেই বসত হাট, যার থেকে এলাকার নামকরণ। এই মাজারের থেকে কয়েক মিটার দূরে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন। এই পুজো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন। পীরের হাটের জগদ্ধাত্রী পুজোয় আজও মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের নামে সংকল্প হয় বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুজোর দিন সূর্যোদয় দেখে পুজো শুরু হয়। বলি দেওয়া হয় আখ, কুমড়ো ইত্যাদি। নবমীতেই হয় চার দিনের পুজো। ওই পুজোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য পুজোর হোমকুণ্ড জ্বলে সারা দিন, যত ক্ষণ পুজো চলে। ভোগ দেওয়া হয় খিচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, তরি-তরকারি, পায়েস, চাটনি, ফ্রায়েড রাইস ইত্যাদি।

শান্তিপুরের আরেকটি প্রাচীন পুজো সেনপাড়া বারোয়ারি। এ বারে তাদের পুজোর ২৯৯তম বর্ষ। এক সময়ে এখানে ছিল কয়েক ঘর ব্রাহ্মণের বাস। স্থানীয়দের কথায়, তাঁদের হাতেই সেই সময়ে পুজো শুরু। এক সময়ে বাড়ির পুজো থাকলেও পরবর্তী কালে তা এলাকার সবার পুজো হয়ে ওঠে। পুজোর ভোগে এখানে দেওয়া হয় চিংড়ির মালাইকারি। তিন বার ভোগ দেওয়া হয়। থাকে সাদা ভাত, ডাল, বিভিন্ন রকমের তরকারি। পরে ভোগে দেওয়া হয় পায়েস, মিষ্টান্ন ইত্যাদি। পাশাপাশি, দেওয়া হয় বিভিন্ন রকমের ভাজা, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, খিচুড়ি।

প্রায় ১৭০ বছরের প্রাচীন সূত্রধর পাড়া বারোয়ারির পুজোয় প্রতিমার রং আবার অরুণ লাল। সূর্যোদয়ের সময় আকাশের যে রং হয়, তাই প্রতিমার গায়ের বর্ণ। কথিত আছে, এক সময়ে এলাকার সূত্রধর সম্প্রদায়ের মানুষজন এই পুজোর সূচনা করে। এখানে দেবীকে দেওয়া হয় কাঁচা ভোগ। আবার, দেড়শো বছরের বেশি পুরনো শান্তিপুরের তামলিপাড়া বারোয়ারির পুজোয় প্রতিমা সজ্জিত হয় সুদৃশ্য ডাকের সাজে। সাজ তৈরি করেন বাসিন্দারাই। পুজোর দুই মাস আগে থেকেই সেই কাজ শুরু হয়ে যায়।

চড়কতলা বারোয়ারির পুজো প্রায় আড়াইশো বছরের। সূর্যোদয়ের সময় উষালগ্নে শুরু হয় পুজো। প্রতিমার রং এখানে তপ্ত কাঞ্চন বর্ণের। মুন্সিপাড়া বারোয়ারিতে পুজিত হন মহিষাসুরমর্দিনী। স্থানীয়দের কথায়, এক সময়ে শ্রাবণ মাসে এখানে মহিষাসুরমর্দিনী পুজো হত। পরে রাজার অনুরোধে তা জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে শুরু হয়। এর পাশাপাশি ষড়ভুজ বাজার, সাহাপাড়ার পুজো, রুপো কালীর মতো একাধিক পুজো শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজোকে সমৃদ্ধ করে এসেছে। বছরের পর বছর ধরে সেই টানেই মানুষ সেখানে যায়। কথিত আছে, এক সময়ে কৃষ্ণনগর থেকে রাজ পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত থাকতেন শান্তিপুরের জগদ্ধাত্রী পুজোয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Shantipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy