Advertisement
E-Paper

বল্লাল ঢিবিতে চাপা পড়ে আছে মধ্যযুগের ইতিহাস

হেরিটেজ শহর হিসাবে ঘোষণার পর প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে শহরের ৮৬টি স্থান। তাদের আনাচকানাচে অনেক না জানা তথ্য, ঐতিহাসিক দলিল। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।নদিয়ার অন্যতম প্রধান শহর নবদ্বীপের উত্তর-পূর্ব কোণে গঙ্গার পূর্ব পারের মায়াপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম বল্লালদিঘি। সেখানেই খোলা আকাশের নীচে অনাদরে-অবহেলায় পরে আছে বল্লাল ঢিবি।

বল্লাল ঢিবি। নিজস্ব চিত্র

বল্লাল ঢিবি। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০৫:২৩
Share
Save

প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন শহরের প্রাচীনত্বের ভিত খুঁজতে গিয়ে পণ্ডিতেরা যে স্মারকটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন, তা হল বল্লাল ঢিবি।

সে যুগের নবদ্বীপ ছিল রাজকীয় বৈভব আর ঐশ্বর্যে ভরা এক নগরী। বাংলার অন্যতম শক্তিশালী রাজা বল্লাল সেনের রাজধানী ছিল নবদ্বীপ। পরে যা তুর্কি উচ্চারণে হয়ে ওঠে নওদিয়াহ। যা থেকেই নাকি পরবর্তী কালে গোটা জেলার নাম হবে নদিয়া!

সেই নদিয়ার অন্যতম প্রধান শহর নবদ্বীপের উত্তর-পূর্ব কোণে গঙ্গার পূর্ব পারের মায়াপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম বল্লালদিঘি। সেখানেই খোলা আকাশের নীচে অনাদরে-অবহেলায় পরে আছে বল্লাল ঢিবি। যা ঠিক ভাবে উৎখনন হলে মধ্যযুগের ইতিহাসের গতিপথটাই হয়তো বদলে যেত। এমনটাই মনে করে প্রত্নতত্ত্বের গবেষকেরা। বল্লাল ঢিবি চিরকালই রহস্যের চাদরে মোড়া এক আশ্চর্য স্থান। আসলে কি এই বল্লাল ঢিবি? সত্যিই কি সেন রাজাদের প্রাসাদের ধ্বংস স্তূপ? না কি এ আদতে এক বৌদ্ধ স্তূপ? নিশ্চিত ভাবে উত্তর মেলে না কিছুরই।

যেমন, উত্তর মেলে না ১৯৮২ সালে ‘ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’ বল্লাল ঢিবি উৎখননের কাজ শুরু করে কেন মাঝ পথে থামিয়ে দিল। যাঁর তত্ত্বাবধানে উৎখনন কাজ চলছিল, সেই সুপারিন্টেন্ডেন্ট আর্কিটেক্ট প্রয়াত অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমান ছিল, বল্লাল ঢিবির উত্তর দিকে মাটির নীচে কম-বেশি এক কিলোমিটার খুঁড়লেই মিলতে পারে মধ্যযুগের ইতিহাসের চাপা পড়ে থাকা কাহিনি। খনন কার্য চলাকালীন তিনি তেমনই নিদর্শন পেয়েছিলেন। কিন্তু মাঝ পথেই থমকে যায় উৎখননের কাজ।

খোলা মাঠে পড়ে আছে বল্লাল ঢিবি। চারপাশে সরকারি জমি জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। ইতিহাসের মূল্যবান উপাদানের দিকে ফিরে তাকানোর সময় নেই কারও।

মায়াপুর বামনপুকুর এক নম্বর পঞ্চায়েতে অবস্থিত বল্লাল ঢিবি দীর্ঘ দিন ধরে সেন রাজপ্রসাদের ধ্বংস স্তূপ বলেই পরিচিত ছিল। যা কালে নিয়মে মাটির ঢিবিতে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই নদিয়ায় মন্দিরের ঐতিহ্য বহু প্রাচীন। তবে বাংলার সর্ব কালের সর্ব বৃহৎ এবং সর্ব প্রাচীনতম মন্দির বলে পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ যাকে চিহ্নিত করে, সেটি ওই বল্লাল ঢিবি। মনে করা হয়, খ্রিস্টীয় সপ্তম বা অষ্টম শতকের ওই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল নবদ্বীপে।

বর্তমানে বামুনপুকুরে বল্লাল ঢিবির ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের একাংশকে আকর্ষণও করে। কিন্তু কীসের মন্দির ছিল সেটি, কারা গড়েছিলেন— এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অসমাপ্ত খনন কাজ থেকে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে মনে করা হয় বাংলার প্রাচীন এই দেবালয়ের গঠন স্থাপত্যের শৈলী ত্রিরথ সর্বতোভদ্র বৌদ্ধ স্তূপের মতো। পরবর্তী কালে যা ‘পঞ্চরথ পঞ্চরত্ন’ ব্রাহ্মণ্য দেবালয়ে পরিণত করা হয়েছিল।

ঐতিহাসিক সুধীররঞ্জন দাশের লেখায় বল্লাল ঢিবিকে বৌদ্ধবিহার বলেই নিশ্চিত ভাবে বলা হয়েছে। তাঁর মতে, উৎখনন থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন সে কথাই বলে।

নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই বল্লাল ঢিবি উৎখনন সম্পূর্ণ হলে মধ্যযুগের ইতিহাসের গতিধারা বদলে যাবে। বহু দিন আগেই এই কাজ হওয়া দরকার ছিল। আশা করি, অসমাপ্ত সেই কাজ হেরিটেজের আওতায় এলে দ্রুত হবে।”

হেরিটেজ হতে চলা শহরের বাঁকে বাঁকে অপেক্ষা করে আছে ইতিহাস। নতুন ভাবে সংরক্ষণের আশায়।

Ballal Dhipi Nabadwip Medieval Period History

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}