গিয়াসউদ্দিন শেখের (ইনসেটে) শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র
উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ— এনআরসি-আতঙ্কে মৃত্যুর তালিকাটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। শুরুটা হয়েছিল ডোমকল থেকে। তার পরে ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, হিঙ্গলগঞ্জ, বসিরহাট, শাসনের পরে শেষ সংযোজন হরিহরপাড়া। সলুয়া গ্রামের চাষি গিয়াসউদ্দিন শেখ (৫৮) গত কয়েক দিন ধরেই হন্যে হয়ে সরকারি অফিসে চরকিপাক দিচ্ছিলেন। আত্মীয়-স্বজনদের কাছেও জমির রেকর্ড চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সব খুঁজে না পেয়ে তিনি একপ্রকার নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। বুধবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন গিয়াসউদ্দিন। তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান। পরিবারের দাবি, এনআরসি আতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে ওই প্রৌঢ়ের।
গত কয়েক দিন ধরেই এনআরসি-র (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) প্রলম্বিত ছায়ায় কুঁকড়ে রয়েছে সীমান্তের গ্রামগুলি। পূর্বপুরুষের নথি কিংবা ভিটেমাটির দলিল জোগাড় করতে স্থানীয় ব্লক অফিস কিংবা ভূমি রাজস্ব দফতরে আতঙ্কিত মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সকলেই খুঁজে বেড়াচ্ছেন জরুরি নথিপত্র। ডোমকলের শিবনগর গ্রামের মিলন মণ্ডলও দিনের পর দিন সরকারি দফতরে মাথা কুটে নথির হদিস না-পেয়ে বাড়ি ফিরে আত্মঘাতী হন। তাঁর পরিবারেরও দাবি, নাগরিক পঞ্জি নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভুগে ভুগে ‘ভয়’ ধরে গিয়েছিল তাঁর। তার জেরেই আত্মহত্যা করেন মিলন।
হরিহরপাড়ার সলুয়া গ্রামের গিয়াসউদ্দিনের সমস্ত নথি ভেসে গিয়েছে ২০০০ সালের বন্যায়। নিজের জমি-জিরেতও তেমন নেই। তাঁর দাদু মারা যাওয়ার পরে মায়ের জমিতেই দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার ছিল গিয়াসউদ্দিনের। তাঁর স্ত্রী সালেহার বিবি বলছেন, ‘‘ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাওয়ার ভয়ে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল মানুষটা। সেই ভয়ই কাল হল গো।’’
গিয়াসউদ্দিনের ছেলে কামালউদ্দিন বলছেন, ‘‘আমাদের আদি বাড়ি ইসলামপুরের কাশিমনগর। এনআরসির ভয়ে জমির রেকর্ডের জন্য গত পনেরো দিনে তিন-চার বার কাশিমনগর গ্রামে খুড়তুতো ভাইদের কাছে আব্বা গিয়েছিল। মঙ্গলবারেও রেকর্ড না পেয়ে আব্বা খুব চিন্তায় ছিল। এনআরসির-ভয়েই আব্বা মারা গেল।’’
রাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের সাইদুল শেখ বলছেন, ‘‘গিয়াসউদ্দিনের মতো বহু লোক জমির রেকর্ড, নথিপত্র জোগাড় করতে হন্যে হয়ে ছুটছেন।’’
পঞ্চায়েত প্রধান জানারুল শেখ বলেন, ‘‘আমরা মানুষকে বলছি, এ রাজ্যে এনআরসি হবে না। অযথা আতঙ্কিত হবেন না। তবুও লোকের ভয় কাটছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy