Advertisement
০৩ অক্টোবর ২০২৪

গুলিতে খুন দোকানি, টানাপড়েন দুই দলের  

সাম্প্রতিক পরপর কয়েকটি খুনের ঘটনায় বিজেপি দাবি করেছে, নিহত তাদের সদস্য বা সমর্থক, যদিও তদন্তকারীদের বক্তব্য তার সঙ্গে মেলেনি।

হরলাল দেবনাথ।

হরলাল দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

রাতে দোকান বন্ধ করার ঠিক আগে এক দোকানিকে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার রাতে রানাঘাটের হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কলাইঘাটা নাথপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম হরলাল দেবনাথ (৫৫)। আঁইশতলা থেকে হবিবপুরের দিকে চলে যাওয়া রাজ্য সড়কের পাশে তাঁর একটি মুদিখানার দোকান আছে। উল্টো দিকে ধু-ধু মাঠ। তাঁর পিঠে গুলি করে দুষ্কৃতীরা ওই মাঠ দিয়েই পালায় বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়।

সাম্প্রতিক পরপর কয়েকটি খুনের ঘটনায় বিজেপি দাবি করেছে, নিহত তাদের সদস্য বা সমর্থক, যদিও তদন্তকারীদের বক্তব্য তার সঙ্গে মেলেনি। দু’দিন আগে বাগআঁচড়ায় পুরোহিত খুনেও একই ঘটনা ঘটে। হরলালকে নিয়ে অবশ্য বিজেপি এবং তৃণমূল, দুই দলই টানাটানি করছে। রানাঘাট ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তাপস ঘোষ এবং বিজেপির দক্ষিণ জেলা বিজেপি সভাপতি মানবেন্দ্রনাথ রায় এবং সাংসদ জগন্নাথ সরকার তাঁদের বাড়িতে গিয়েছেন। যদিও হরলালের স্ত্রী চন্দনার বক্তব্য, তিনি কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

নিহতের বাড়িতে বিজেপির জগন্নাথ সরকার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ দোকান বন্ধ করার আগে সামনে ঝাঁট দিচ্ছিলেন হরলাল। সেখান থেকে তাঁদের বাড়ি প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে। হরলালের ভাই মহেন্দ্র এবং স্ত্রীও দোকানে ছিলেন। দুই যুবক দোকানে এসে সিগারেট-চানাচুর কেনে। আর এক যুবক রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কারও সঙ্গে কথা বলছিল। হঠাৎ কালিপটকা ফাটার মতো শব্দ। চন্দনা বলেন, “বেরিয়ে দেখি, উনি দাঁড়িয়ে কাতরাচ্ছেন। পিঠ থেকে রক্ত ঝরছে। ছেলেগুলো নেই। আশপাশের লোকজন এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।” মহেন্দ্র বলেন, “দু’টি অপরিচিত যুবক এসেছিল। কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলে ওরা বলে, আঁইশতলা।” রাজনীতি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দাদা মাঠে-ময়দানে নেমে রাজনীতি করত না। কিন্তু লোকসভা ভোটের পর থেকে আমরা বিজেপিকে সমর্থন করছি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হরলাল মাঠে নেমে রাজনীতি না করলেও গ্রামে তাঁর প্রভাব ছিল। বিভিন্ন সময়ে কখনও সিপিএম, কখনও তৃণমূল, কখনও বিজেপি করেছেন। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে ওই গ্রামের বুথ থেকে সিপিএম জিতেছিল। লোকসভা ভোটে এগিয়ে যায় বিজেপি। এ দিন গ্রামে গিয়ে তৃণমূলের তাপস ঘোষ দাবি করেন, “পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে উনি ওই বুথে আমাদের দশ জনের কমিটির সদস্য ছিলেন। ফায়দা তুলতে বিজেপি এখন ওঁকে তাদের কর্মী বলে দাবি করছে।” মানবেন্দ্র রায়ের পাল্টা দাবি, “উনি আমাদের দীর্ঘদিনের কর্মী। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করেছে। এলাকার মানুষ সব জানেন।”

নিহতের বাড়িতে তৃণমূলের তাপস ঘোষ। ছবি: প্রণব দেবনাথ

পুলিশের অনুমান, পুরনো কোনও শত্রুতার কারণে এই খুন হয়ে থাকতে পারে। হরলালের পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও দুই ছেলেমেয়ে রয়েছেন। ছেলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত হরলালের পরিবারের তরফে নির্দিষ্ট করে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। চন্দনা বলেন, “উনি কোনও দিনই দল করতেন না। কেন ওঁকে খুন করল, বুঝতে পারছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Police TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE