হাতে-হাতে: সকাল বিকেল একই দৃশ্য। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
‘অবাক জলপানের’ সেই বৃদ্ধ পড়শির জলের ফর্দটা মনে আছে? গ্রীষ্মের দুপুরে জলের খোঁজে হন্যে পথিক। তাঁকে জল খাওয়ানোর বদলে নানা রকম জলের ফিরিস্তি শুনিয়ে চলেছেন এক বৃদ্ধ। সেই তালিকার প্রথম দিকেই কিন্তু ছিল ডাবের জল।
নাটকের সেই পথিকের কপালে ডাবের জল না জুটলেও এই গরমে পথচলতি মানুষের ডাবই ভরসা। সে তিনি ভোটের ডোমকলে প্রচারে ব্যস্ত নেতা-কর্মীই হোক কিংবা নবদ্বীপ মায়াপুরের দেশিবিদেশি পর্যটকডাবের চাহিদা এ বছর তুঙ্গে।
এক সময় মায়াপুর-নবদ্বীপের স্বাস্থ্য সচেতন বিদেশি পর্যটকদের ডাব খাওয়ার বহর দেখে অবাক হতেন স্থানীয় লোকজন। নিজেদের মধ্য তাঁরা বলাবলি করতেন, ‘‘ও তো রোগীর পথ্য গো। সাধ করে ও জিনিস কিনে কেউ খায় নাকি!’’ কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডাব নিয়ে সেই পুরনো ধারণা আমূল বদলে গিয়েছে। বহরমপুর থেকে বেলডাঙ্গা, কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর, জলঙ্গি থেকে জঙ্গিপুরে ডাবের চাহিদা দেখলেই সে কথা মালুম হয়।
দুয়ারে ভোট ডোমকলে। কড়া রোদের মধ্যেই চলছে জোরদার প্রচার। প্রতিদিনই কোনও না কোনও দলের বড় নেতা কিংবা মন্ত্রী প্রচারে আসছেন। অন্য বিষয়ে যতই মতপার্থক্য থাকুক, গরমে সকলেরই এক রা—‘কই রে, ডাবগুলো এ বার আন।’ নিট ফল, ২৫ টাকার নীচে ডাব মিলছে না ডোমকলে। এরপর সাইজ অনুযায়ী দাম চড়ছে। স্থানীয় ডাব বিক্রেতা রজ্জাক মণ্ডল, ইয়াসিন শেখেরা জানাচ্ছেন, দু’বছর আগে ৬-৭ টাকায় যে ডাব তাঁরা কিনতেন, সেই ডাবই এখন ১০-১৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ফলে তাঁদেরও দাম বাড়াতে হচ্ছে।
বেলডাঙ্গায় অবশ্য এখনও ১৫ টাকায় ডাব পাওয়া যাচ্ছে। তবে তেমন বড় ডাব ৩৫ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। বহরমপুরে এখন একটি ডাবের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। নবদ্বীপ বা মায়াপুরে আবার বহু লোক শুধু এই ক’মাসের জন্য অন্য পেশা ছেড়ে ডাবের ব্যবসায় নেমে পড়েন। প্রফুল্লনগরের কমল দেবনাথ, প্রাচীন মায়াপুরের উপেন সাহারা ভিন রাজ্যে অন্য কাজ করেন। দোলের আগে তাঁরা নাগাদ চলে আসেন নবদ্বীপ। তারপর বর্ষার আগে পর্যন্ত তাঁরা ডাব বিক্রি করেন। মূলত মঠ-মন্দিরের সামনে ডাবের ট্রলি দাঁড় করিয়ে চলে বিকিকিনি। তাঁদের কথায়, ‘‘ভিনরাজ্যে কঠিন পরিশ্রম করে যে টাকা আয় হয়, তার থেকে অনেক কম খাটনিতে ডাব বিক্রি করে দ্বিগুণ টাকা আয় হয়। সেই কারণেই বছরের এই সময়টাতে চলে আসি।’’
কয়েক দশক আগেও পয়লা বৈশাখ কিংবা অক্ষয় তৃতীয়ার দিন হালখাতা করতে আসা ক্রেতাদের কচি ডাব দিয়ে আপ্যায়ন করতেন চক-ইসলামপুর বাজারের বহু ব্যবসায়ী। আগের দিন জল ভর্তি মাটির বড় হাঁড়িতে সেই কচিডাব ডুবিয়ে রাখা হত। বৈশাখের প্রখর দাবদাহে সেই শীতল পানীয়ের স্বাদ ছিল অমৃত সমান। হালের হালখাতায় ডাবের প্রচলন উঠে গিয়েছে। কিন্তু গরমের দুপুরে ডাবের জলের বিকল্প নেই।
গ্রীষ্মকালে বাড়িতে অতিথি এলে ডাবের জল দিয়ে আপ্যায়নের রীতিও বহু পুরনো। সেই রীতি এখন অনেকটাই বদলেছে। পুকুর ও গাছের সংখ্যা দুই ক্রমশ কমছে। ফলে চাহিদা বাড়লেও জোগান কমছে। দাম বাড়ছে সেই কারণেই।
(সহ প্রতিবেদন: সুজাউদ্দিন, সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়, অনল আবেদিন)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy