Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সিংহাসনে বসেই ঝাড়ফুঁক টুকটুকি ওঝার

নাকাশিপাড়ার দোগাছি পঞ্চায়েতের নাংলা গ্রামের জান্নাবি-র মৃত্যু হয়। মারাত্মক ভাবে জখম জাহাঙ্গির শক্তিনগর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।

এই ঘরে ঝাড়ফুঁক চালাতেন টুকটুকি। নিজস্ব চিত্র

এই ঘরে ঝাড়ফুঁক চালাতেন টুকটুকি। নিজস্ব চিত্র

সন্দীপ পাল 
নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৫
Share: Save:

ঘরের চার দিকে সাদা পর্দা টাঙানো। মাঝখানে উঁচু একটা বেদি। তার উপরে সোনালি রঙের কারুকাজ সিংহাসন! পাশে টেবিলে কাঁসার থালায় নানা রকম উপকরণ। সঙ্গে রয়েছে ঝাড়ন, কুলো, তাকিয়ে।

বেথুয়াডহরি কাঁঠালবেড়িয়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওঝা আলপনা বিবি ওরফে টুকটুকি বিবি এই ঘরেই সিংহাসনে বসে ঝাড়ফুঁকের কাজ করতেন। অভিযোগ, এখানেই বছর দশেকের জান্নাবি শেখ ও তার দাদা জাহাঙ্গিরের শরীরে ‘জিন তাড়ানো’র নাম করে গরম তেল আর ঘি ঢেলেছিলেন আলপনা। শরীরের অর্ধেক অংশ পুড়ে যাওয়ায় শুক্রবার নাকাশিপাড়ার দোগাছি পঞ্চায়েতের নাংলা গ্রামের জান্নাবি-র মৃত্যু হয়। মারাত্মক ভাবে জখম জাহাঙ্গির শক্তিনগর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।

ওঝার তেল পোড়া ও ঝাড়ফুঁকের কারণে কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পরেই নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ শুক্রবার রাতে ওই ওঝাকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার তাঁকে কৃষ্ণনগর কোর্টে হাজির করা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। শনিবার টুকটুকি বিবির বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাবা-মা পালিয়ে গিয়েছেন। বাড়িতে রয়েছেন শুধুমাত্র তাঁর এক বোন রেশমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘‘দিদি ঝাড়ফুঁকের কাজ করত আর সেই কাজে তেল, ঘি, লঙ্কা-র মতো অনেক জিনিস দরকার হত।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই পরিবার চার বছর আগে অন্য গ্রাম থেকে উঠে এসেছিল। গ্রামের অন্যদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভাল না। গ্রামের তরফে একাঘিক বার ঝাড়ফুঁক বন্ধ করার চেষ্টা হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পারা যায়নি।। এক বার টাকা পয়সা নিয়ে এক জনের সঙ্গে টুকটুকির ঝামেলা হয়। তখন পুলিশ এসেছিল বলেও তাঁরা জানিয়েছেন। বেথুয়াডহরি-১ এর পঞ্চায়েত সদস্য মেরিনা খাতুন বলেন, ‘‘খুব দুঃখের বিষয়। পঞ্চায়েতের তরফ থেকে যাতে এলাকায় প্রচার করানো যায় তা দেখব। ওঝার শাস্তি চাইছি।’’

এ দিন মৃত জান্নাবি শেখের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, এলাকা থমথম করছে। গরিব দিনমজুর পরিবার। পাড়ার লোক জানান, জাহাঙ্গির অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। এক জনের মুখে ওই ওঝার নাম শুনে মা আলফিনা তাকে রবিবার সেখানে নিয়ে যান। রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ঝাড়ফুঁক চলার পরে ওঝা জানান, ছেলেটিকে ‘জিনে ধরেছে’। এর পরে ছোট ছেলে জান্নাবি শেখের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তা শুনে আলফিনা বুধবার জান্নাবিকে ওঝার কাছে নিয়ে যান। তাঁদের অভিযোগ, রাত থেকে ঝাড়ফুঁকের নাম করে গরম তেল ও ঘি দিয়ে ছেঁকা দেওয়া হয় জান্নাবিকে।

নদিয়া জেলার বিজ্ঞানমঞ্চের সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এখনও সমাজের সর্বস্তরে বিজ্ঞানের আলো পৌঁছয়নি এর থেকে বোঝা যাচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Soothsayer Nakashipara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy