গত এক দশক ধরে রানাঘাট লোকসভা তৃণমূলের কাছে নিরাপদ আসন হিসাবেই চিহ্নিত হয়ে এসেছে। এ বার সেখানেই গেরুয়া ঝড়ে ধসে গিয়েছে তাদের একের পর এক স্তম্ভ। জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি, একাধিক কর্মাধ্যক্ষ, রাজ্যের মন্ত্রী এখান থেকে নির্বাচিত। তবুও পাঁচ বছর আগে ২ লক্ষ দু’হাজার ভোটে জেতা আসন এ বার তাদের হারাতে হয়েছে ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ভোটে! সাতটি বিধানসভার মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু নবদ্বীপ। মুসলিম প্রধান গ্রামীণ ভোটের সৌজন্যে শুধু সেখানেই সামান্য লিড ধরে রাখতে পেরেছে তৃণমূল।
২০০৯ সালে লক্ষাধিক ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। ২০১৪ সালে সেই ব্যবধান আরও বাড়ে। দু’বারই বিজেপি ছিল তৃতীয় স্থানে। পাঁচ বছর আগে এই আসনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ২ লক্ষ ৩৩ হাজার, মোটে ১৭ শতাংশ। বামেরা পেয়েছিল ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ভোট, ২৯ শতাংশ। আর তৃণমূল পায় ৫ লক্ষ ৯০ হাজারেরও বেশি ভোট, ৪৪ শতাংশ। এ বার সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। বিজেপির ভোট প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। তৃণমূল হারিয়েছে সাত শতাংশ ভোট। সিপিএম ২২ শতাংশ ভোট হারিয়ে নেমে এসেছে সাত শতাংশে। কংগ্রেস পাঁচ শতাংশ ভোট হারিয়ে প্রায় ভ্যানিশ।
তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটে রানাঘাট লোকসভা এলাকার সাতটি বিধানসভার মধ্যে তিনটি হারাতে হয়েছিল তৃণমূলকে। তা গিয়েছিল বাম-কংগ্রেস জোটের দখলে। রানাঘাট উত্তর পশ্চিম ও শান্তিপুরের কংগ্রেস বিধায়কেরা পরে তৃণমূলে যোগ দেন। থেকে যান কেবল সিপিএম বিধায়ক রমা বিশ্বাস, এ বার লোকসভার প্রার্থী। সে বার সব আসনেই তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। বছর চারেক আগে কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচন ছাড়া আগাগোড়া সেটাই ছিল তাদের স্থান। ২০১৪ সালে নবদ্বীপ বিধানসভা এলাকায় বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ব্যবধান ছিল ৫৩ হাজারেরও বেশি। রানাঘাটে ভরাডুবির মাঝে একমাত্র এই নবদ্বীপেই চার হাজার লিড ধরে রেখেছে তৃণমূল।
ঘটনা হল, গ্রামীণ নবদ্বীপের দশটি পঞ্চায়েতের মধ্যে চারটিতে এগিয়ে আছে বিজেপি, এগিয়ে আছে নবদ্বীপ শহরের ১৮টি ওয়ার্ডেই। কিন্তু মূলত সংখ্যালঘু এলাকায় নিজেদের ভোট ধরে রেখে বাকি ছয়টি পঞ্চায়েতে তাঁদের পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোট না হওয়ার ক্ষোভও এই এলাকায় ছিল না। সদ্যপ্রয়াত বিধায়কের কৃষ্ণগঞ্জেও সহানুভূতির ভোট বা মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক কাজ করেনি তৃণমূলের পক্ষে। মতুয়া অধ্যুষিত কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণের মতো জায়গায় ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। কৃষ্ণগঞ্জে গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী প্রায় ৩৬ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন, বিজেপির সঙ্গে ব্যবধান ছিল প্রায় ৬৮ হাজার। এ বার লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী এগিয়ে আছেন প্রায় ৩৭ হাজার ভোটে।
পাঁচ বছর আগে রানাঘাট উত্তর-পূর্ব বিধানসভা এলাকায় বিজেপির থেকে প্রায় ৪৭ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এ বার পিছিয়ে গিয়েছে প্রায় ৪৩ হাজারে। জেলায় এক মাত্র বামেদের হাতে থাকা বিধানসভা কেন্দ্র রানাঘাট দক্ষিণে সিপিএম যতটা পিছিয়েছে, ততই এগিয়েছে বিজেপি। পাঁচ বছর আগে এখানে বিজেপির চেয়ে প্রায় ৩৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এ বার বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটে। মন্ত্রী রত্না ঘোষের বিধানসভা কেন্দ্র চাকদহতেও ভরাডুবি। পাঁচ বছর আগে যেখানে বিজেপির চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল, এ বার বিজেপি প্রায় ৩০ হাজার ভোটের লিড নিয়েছে। তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছে শান্তিপুরেও। গত লোকসভা ভোটে বিজেপির চেয়ে প্রায় ৩৮ হাজার ভোটে এগিয়ে থেকেও এ বার ৩৫ হাজারে পিছিয়ে পড়েছে তারা। শান্তিপুর শহরে ১২ হাজারেরও বেশি ভোটে পিছিয়ে তারা। গ্রামীণ শান্তিপুরে পিছিয়ে ২৩ হাজার ভোটে।
এই লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের নির্বাচন পরিচালনার মূল মাথা যিনি, সেই শঙ্কর সিংহের রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রেও পিছিয়ে আছে তৃণমূল। গত লোকসভা ভোটে বিজেপির চেয়ে প্রায় ৪৭ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল, এ বার বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার ভোটে। শঙ্কর বলছেন, “আমরা এই ফলের মূল্যায়ন করব।”
একটু দেরি হয়ে গেল না ?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy