ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োর সেই দৃশ্য। —নিজস্ব চিত্র।
এ গ্রামের রাস্তা এমনই, এখানে চার চাকা চলে না। ফলে অ্যাম্বুল্যান্সেরও ‘প্রবেশ নিষেধ।’ হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হলে ভরসা ‘চার পায়া’ বা খাটিয়া। পাড়াপড়শি বা আত্মীয়স্বজনেরা সেই খাটিয়ায় চাপিয়ে কাঁধে করে রোগীকে নিয়ে যান হাসপাতালে।
রাতবিরেতে রোগীর শ্বাস উঠলে ওই ভাবে হাসপাতালে যেতে কালঘাম ছুটে যায় গ্রামবাসীদের। এখন-তখন অবস্থা হলে অনেক সময় ওই চার পায়াই শেষযাত্রার বাহন হয়ে যায়।
গ্রামের নাম ভবানন্দপুর। তবে এই গ্রামের গ্রামবাসীদের কথায় এ এক ‘অসহায় গ্রাম’ যা স্বাধীনতার এত বছর পরও প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হয়নি।
সম্প্রতিই এই গ্রামে বাঁশের খাটিয়ায় এক ব্যক্তিকে বয়ে নিয়ে যাওয়া দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। তাতে দেখা যাচ্ছে মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো করে এক মুমূর্ষু রোগীকে বাঁশের খাটিয়ায় শুইয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে! বাঁশ দিয়ে তৈরি স্ট্রেচারের মতো দেখতে ওই ‘খাটিয়া’ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন চার জন মিলে। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা জানান, রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। গ্রামের নাম জানতে চাওয়া হলে বলেন, তাঁরা মুর্শিদাবাদের ভবানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামে অ্যাম্বুল্যান্স কিংবা সাধারণ যান চলাচলের মতো রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়েই এই পন্থা নিতে হচ্ছে তাঁদের। ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। তবে ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
এ ব্যাপারে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে গ্রামবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তাঁরা বলেন, ভবানন্দপুর গ্রামের এই রাস্তাটির সংস্কার হয়নি বহু বছর। বিভিন্ন জায়গায় এই রাস্তার জন্য দরবার করা হয়েছে। তার পরও সুরাহা মেলেনি। গ্রামের মানুষের প্রয়োজন পড়লেও এই রাস্তায় গাড়ি ঢোকে না। রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চরম অসুবিধায় পড়তে হয়। অসহায় গ্রামবাসীরা একরাশ আক্ষেপ নিয়ে বলছেন, ‘‘এ রকম অসহায় গ্রাম আর কোথাও নেই। দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর হয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমাদের এই গ্রাম এখনও স্বাধীন হয়নি।”
গ্রামবাসীদের এই দুর্দশা নিয়ে সরকারকে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে বিরোধী শিবির। কংগ্রেস নেতা জয়ন্ত দাস বলেন “ভবানন্দপুর দেখে মনে হচ্ছে, এট বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। উন্নয়নের জোয়ারে রাস্তা ভেসে যাচ্ছে।’’ অন্য দিকে স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য, রাস্তা তৈরির টাকা কেন্দ্র আটকে দিয়েছে বলেই রাস্তা হচ্ছে না। কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম সরকারের বক্তব্য, যে জায়গাটির নাম বলা হচ্ছে, সেখানে কোনও কালেই পাকা রাস্তা ছিল না। বলতে গেলে রাস্তা বলেই কিছু ছিল না সেখানে। আমরাই মাটি দিয়ে রাস্তা করে দিয়েছি। আড়াই কিলোমিটার রাস্তার প্রস্তাব গিয়েছে, সেটা অনুমোদন হয়ে গেলেই হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা না ছাড়লে কী ভাবে রাস্তা হবে। ওটা তো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প।”
মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব সরকার অবশ্য রাস্তার দায় ঠেলেছেন পুরনো শাসক বামেদের দিকে। তিনি বলেছেন, ‘‘বাম জমানার অনুন্নয়ন। সেই বোঝা বইতে হচ্ছে আমাদের। অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি। বাকি জায়গাগুলোর খুব তাড়াতাড়ি উন্নয়ন শেষ হবে।’’ কান্দির মহকুমা শাসক উৎকর্ষ সিংহ আবার জানিয়েছেন, তিনি বেহাল রাস্তার কথা সম্প্রতি শুনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ রকম একটা গ্রামীণ রাস্তা খারাপ রয়েছে শুনেছি। সংশ্লিষ্ট বিডিও-র সঙ্গে কথা বলেছি। খুব তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy