Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja

মায়ের পায়ে শিকল, মুখে আঁচল, পেট কাটা, ৪১৯ বছর ধরে এই রূপেই গদাইপুরে পূজিতা দেবী

গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে আখরি নদী। এই নদীর তীর থেকে মাটি এনেই দেবী প্রতিমা গড়া হয়। দৈর্ঘ্য ৯ ফিট ও চওড়ায় ১৩ ফিট। কয়েকশো বছর ধরে মাপের কোনও হেরফের হয়নি।

৪১৯ বছর ধরে এই রূপেই দুর্গাকে পুজো করে চলেছে গদাইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার।

৪১৯ বছর ধরে এই রূপেই দুর্গাকে পুজো করে চলেছে গদাইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:১৫
Share: Save:

বহরমপুর

মায়ের পায়ে শিকল বাঁধা। মুখে শাড়ির আঁচল। প্রতিমার পেটকাটা!

৪১৯ বছর ধরে এই রূপেই দুর্গাকে পুজো করে চলেছে গদাইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। ‘পেটকাটি দুর্গা’ বলে পরিচিত মা। কেন এই নাম, তার নেপথ্যে রয়েছে অদ্ভুত এক গল্প।

মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে প্রাচীন জনপদ রঘুনাথগঞ্জ। সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার গেলেই আহিরণ। ঠিক তার পাশের গ্রাম গদাইপুর। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে আখরি নদী। এই নদীর তীর থেকে মাটি এনেই দেবীপ্রতিমা গড়া হয়। দৈর্ঘ্য ৯ ফিট ও চওড়ায় ১৩ ফিট। কয়েকশো বছর ধরে মাপের কোনও হেরফের হয়নি।

৪০০ বছরেরও বেশি সময় আগে এই দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। সেই সময় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার আর্থিক ভাবে সম্পন্ন ছিল। কথিত আছে, দুর্গাপুজোর জন্য এক দরিদ্র ব্রাহ্মণকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্ত্রী ও একমাত্র কিশোরী মেয়েকে নিয়ে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের মন্দিরের পাশে থাকতেন সেই পুরোহিত। কোনও এক বার সন্ধিপুজোর সময় পুরোহিতের মেয়ে পুজোর উপচার তৈরি করছিল। হঠাৎই সে নিখোঁজ হয়ে যায়। এক মাত্র মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে দেবীর সেবায়েত মূর্তির সামনেই হত্যে দিয়ে পড়ে ছিলেন সারা রাত। সেই ভোরেই ব্রাহ্মণকে স্বপ্নে দেবী জানান, তাঁর মেয়ের রূপে মুগ্ধ হয়ে তিনি লোভ সামলাতে না পেরে গিলে ফেলেছেন।

পরের দিন দেবীর নির্দেশ মতোই পুজোয় ছাগ বলি দেওয়া হয়। এর পর দেবীপ্রতিমার পেট কেটে কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। সেই থেকে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দেবী পেটকাটি দুর্গা নামে পরিচিত। ক্রমে সেই গল্প লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে।

এখনও দেবী প্রতিমার মুখে এক টুকরো কাপড় লাগানো থাকে। পায়ে বাঁধা থাকে শেকল। সেই প্রাচীন রীতি মেনে প্রতিমা তৈরির সময় কেটে রাখা হয় পেট। মুখে আটকানো শাড়ির আঁচল ওই কিশোরীকে খেয়ে ফেলার প্রতীক হিসাবে মনে করা হয়। ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে সেই থেকেই দেবীর পায়ে প্রতীকী শেকল পরানো থাকে।

পুজোর চার দিন মা দুর্গাকে অন্ন ভোগ দেয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। বোধন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো। ষষ্ঠীর দিন হয় বলিদান। সপ্তমী ও নবমীতে দেওয়া হয় আমিষ ভোগ। পুজোকে ঘিরে রয়েছে আরও এক গল্প। পঞ্চমীর সকালে নিয়ম মেনে প্রতি বছর হাজির হয় পাঁচ কপোত-কপোতি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, তারা উমা পরিবারেরই জীবন্ত রূপ। পুজো শেষে দশমীর দিন লোকচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে যায় ওই পায়রারা।

দশমীর দিন আখরি নদীপথে নৌকো করে পেটকাটি দুর্গাপ্রতিমাকে আনা হয় জঙ্গিপুর সদর ঘাটে। এলাকার অন্যান্য দুর্গা প্রতিমাও আনা হয় সদর ঘাটে। বসে মেলা, চলে বাইচ। সব প্রতিমার সঙ্গে সাক্ষাতের পর একাদশীর দিন বেলা ১১টায় জঙ্গিপুর শ্মশানঘাটে প্রথমে পেটকাটি প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। তার পর বাকি প্রতিমার নিরঞ্জন হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Durga Puja 2022 Tradition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy