মাধ্যমিকের প্রস্তুতি। সোমবার রানাঘাটে। নিজস্ব চিত্র
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। স্কুলের প্রথম ব্যাচ হিসাবে নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুল থেকে সেই পরীক্ষাতে বসতে চলেছে একঝাঁক দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগকে ছাপিয়ে তাই স্মৃতি, মারিফা, তাইবা, জয়নাভরা ভাসছে বহু লড়াইয়ের পর জয়ের প্রথম সোপানের কাছে পৌঁছনোর উচ্ছ্বাসে।
এই স্কুল থেকে ন’ জন পড়ুয়া এ বছর মাধ্যমিক দিচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ একশো শতাংশ দৃষ্টিহীন, কারও দৃষ্টির প্রতিবন্ধকতা তার থেকে কিছুটা কম। প্রত্যেককেই অনুলেখক নিয়ে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। খুশি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। তাঁদের তিন দশকের লড়াই সাফল্য পেল এত দিনে।
৯৯০ সালে নবদ্বীপে কয়েক জন উৎসাহী যুবকের চেষ্টায় গড়ে উঠেছিল দৃষ্টিহীনদের এই স্কুল। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে চলার পর ১৯৯৭ সালে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে এপিসি ব্লাইন্ড স্কুল। ২০০০ সালে এটি সরকার পোষিত হয়। তখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের অনুমোদন মেলে। পরবর্তী দেড় দশক মাধ্যমিকে উন্নীত হওয়ার জন্য চলে নিজেদের প্রমাণ করার পালা। অবশেষে ২০১৮ সালে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এখানে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার অনুমোদন দেয় বলে জানালেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক দেবাশিস ভট্টাচার্য।
তার আগে পর্যন্ত স্কুলের দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের অষ্টম শ্রেণির পরে অন্য কোনও সাধারণ স্কুলে ভর্তি হতে হতো। যদিও যাবতীয় পড়াশোনা তারা করত এপিসি স্কুলের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছেই। কারণ, তাদের পড়াশোনা করতে হত ব্রেইল পদ্ধতিতে, যা সাধারণ স্কুলের শিক্ষকদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও এই স্কুলের পড়ুয়া হিসেবে তারা মাধ্যমিকে বসতে পারত না। এ ব্যাপারে দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ছিল শিক্ষক ও পড়ুয়াদের। এই বছর থেকে আর সেই আক্ষেপ আর রইল না।
নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুলের শিক্ষক তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর নদিয়া জেলা সম্পাদক বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন “২০১৮ সালে ওয়েস্টবেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন এই ধরনের একটিমাত্র স্কুলকে মাধ্যমিক স্কুলের মর্যাদা দিয়েছে, সেটি আমাদের স্কুল। হুগলির উত্তরপাড়ার পর থেকে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত দৃষ্টিহীনদের কোনও মাধ্যমিক স্কুল নেই। ফলে সুদূর আলিপুরদুয়ার, দিনাজপুর, কোচবিহার এমনকি ঝাড়খণ্ড থেকেও আমাদের স্কুলে এখন ছাত্রছাত্রী আসছে।’’
আবেগ, উত্তেজনা, শুভেচ্ছায় ভাসতে-ভাসতে ব্রেইল বইয়ে হাত বুলিয়ে শেষ মুহূর্তে সিলেবাস ঝালিয়ে নিচ্ছে পড়ুয়ারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy