মরিয়া: সোমবার রাতে রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
আগুনের সঙ্গে লড়তে গিয়ে কখনও বালতি ধরতে হয়েছে পুলিশকে, কখনও পাইপ লাগিয়ে মাঝ রাতে জলের জোগান দিয়ে গিয়েছে হোটেলকর্মী। সোমবার রাতভর ফুলতলার ভয়াবহ আগুনের সঙ্গে লড়তে হল সাধারণ মানুষকেই।
অসম সেই লড়াইয়ে শেষতক হেরেই যেতে হত স্থানীয় বাসিন্দাদের। দেড়ঘণ্টার দূরত্ব ভেঙে দমকলের ইঞ্জিন না এলে। তবে আগুন এত বিধ্বংসী হয়ে উঠত না, যদি দমকলের একটি ইঞ্জিনও সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারত।
সোমবার রাতের এই আগুন জঙ্গিপুর-রঘুনাথগঞ্জে ফের উস্কে দিল শহরে দমকল কেন্দ্র স্থাপনের প্রশ্নটি। দেড়শো বছরের প্রাচীণ মহকুমা শহর জঙ্গিপুর পুরসভা আজও দমকলহীন। বাম আমলে ৩৪ বছর কেটেছে হচ্ছে-হব আশ্বাসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্তমান সরকারের আমলেও গয়ংগচ্ছ ভাব।
শহরে দমকল না থাকার ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে গত ৬ মাসে তিন-তিন বার তা প্রত্যক্ষ করল জঙ্গিপুর। ৪ ফেব্রুয়ারি সাত সকালে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার একটি গুদাম। আর, ২৮ মার্চ গভীর রাতে বাস স্ট্যান্ডে পুড়েছে একাধিক বাস। দু’টি ক্ষেত্রেই ধুলিয়ান থেকে দমকলের গাড়ি আসতে সময় লাগায় অগ্নিকান্ড ভয়াবহ আকার নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফুলতলায় ক্ষতিগ্রস্ত পুড়ে যাওয়া এক দোকান মালিক ইমরান কবীর বলছেন, “সবে দোকান বন্ধ করে বাড়ি গিয়ে খেতে বসেছি। তখনই একটা ফোন এল। ফুলতলার দোকানে আগুন লেগেছে। পুড়ছে আমার দোকানও। আশপাশের দোকানেও ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। যদি জঙ্গিপুরের আশপাশে কোথাও দমকল কেন্দ্র থাকত তাহলে আগুন এত ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারত না। এত ক্ষয়ক্ষতিও হত না আমাদের।’’ আর এক দোকানদার হুমায়ূন কবীরের দাবি, “বাড়ি থেকে ছুটে এসে দেখি দাউ দাউ করে জ্বলছে আমার দু-দুটো দোকান। দোকান থেকে কিছু বের করব সে উপায়ও নেই। ব্যাগ, ছাতা ইত্যাদি মাল ভর্তি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে চোখের সামনে।’’
পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “বর্তমানে পুরশহরে জনসংখ্যা প্রায় ১.২০ লক্ষ। রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের জন সংখ্যাও লক্ষাধিক। অগ্নিকান্ডের ঘটনা ও ভয়াবহতা অন্যান্য শহরের থেকে জঙ্গিপুরে অনেক বেশি। অথচ এ শহরে আজও দমকলহীন। গত চার দশক ধরে বার বার রাজ্য সরকারের কাছে দমকলের প্রস্তাব গিয়েছে। পূর্ত দফতর থেকে জানানো হয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই উমরপুরে ৪৯ শতক জমি রয়েছে তাদের। তবু তা নিছকই লোক দেখানো।’’ সেই জমিরই ৩৪ শতক সম্প্রতী হস্তান্তর করা হয়েছে দমকল দফতরকে। পুরসভার পক্ষ থেকে তিনি নিজে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর কাছে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু সাড়া পাননি বলে তাঁর দাবি।
প্রায় ৩০ বছর জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান ছিলেন সিপিএম নেতা মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, “বহুবার জঙ্গিপুর পুরসভা থেকে দমকলের প্রস্তাব গিয়েছে। কিন্তু জমির সমস্যার কারণে বার বার তা ভেস্তে গেছে।” প্রাক্তন কাউন্সিলার ও তৃণমূল নেতা বিকাশ নন্দ বলছেন, “জঙ্গিপুরে দমকল কেন্দ্র গড়তে জমি পূর্ত দফতর হস্তান্তর করেছে দমকল দফতরকে। কিন্তু কেন আটকে আছে তা আমারও বোধগম্য হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy