Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

দু’দিন বাবার দেহ ঘরে, ধৃত

বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পাওয়ার পরে কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ গিয়ে পচতে থাকা দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম অনন্ত চক্রবর্তী (৬৩)। বাড়ি মাজদিয়ায়। তাঁকে খুনের অভিযোগে তাঁর ছোট ছেলে প্রণব চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সেই বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

সেই বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
মাজদিয়া শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

দু’দিন ধরে ঘরের ভিতর পড়ে রইল প্রৌঢ়ের মৃতদেহ। একই বাড়িতে দু’দিন কাটিয়ে দিলেন তাঁর স্ত্রী-ছেলে। কিন্তু পড়শিরা কেউ জানতেও পারলেন না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পাওয়ার পরে কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ গিয়ে পচতে থাকা দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম অনন্ত চক্রবর্তী (৬৩)। বাড়ি মাজদিয়ায়। তাঁকে খুনের অভিযোগে তাঁর ছোট ছেলে প্রণব চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনন্তর দুই ছেলে। বড় ছেলে বাপ্পাদিত্য চক্রবর্তী একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বহু দিন ধরে তিনি উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে থাকেন। মাজদিয়ার বাড়িতে অনন্তের সঙ্গে থাকতেন তাঁর স্ত্রী শুক্লা ও প্রণব। পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রণব মদ্যপ। প্রায় প্রতিদিনই সে মদ খেয়ে এসে বাড়িতে অশান্তি করত। মদ কেনার টাকা না দিলে অনন্ত এবং স্ত্রীকে মারধর করত। তার অত্যাচার সহ্য করতে না-পেরে বছর দেড়েক আগে তার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অনন্তর একটি ছোট দোকান ছিল। তা বিক্রি করে সেই টাকা তিনি ব্যাঙ্কে রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর থেকে টাকা আদায়ের জন্য ছেলের অত্যাচারের মাত্রা কমেনি। মঙ্গলবার রাতেও প্রণব বাবাকে মারধর করে বলে অভিযোগ। সেই মারের চোটেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান। বৃহস্পতিবার দুপুরে বড় ছেলে বাপ্পাদিত্য এসে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে প্রণবকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরেই শুক্লা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। সব সময় দরজায় ভিতর থেকে তালা দেওয়া থাকত। বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলতেন না তিনি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে একমাত্র অনন্তরই যোগাযোগ ছিল। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ তাকে শেষ বার দেখেছিলেন পড়শিরা। এমনিতে যেহেতু তাঁদের বাড়ির দরজা-জানলা সময় বন্ধ থাকত, তাই কারও সন্দেহ হয়নি। শুক্রবার সকালে শুক্লা বেরিয়ে এসে প্রতিবেশীদের বলেন, তাঁর স্বামী বৃহস্পতিবার রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়েছিলেন। সকালে ডাকাডাকি করলেও উঠছেন না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্লার কথা প্রথমে কেউ বিশ্বাস করেনি। পরে কয়েক জন বাড়িতে ঢুকে দেখেন, খাটে অনন্তের পচতে থাকা মৃতদেহ পড়ে। পাশের ঘরে নেশার ঘোরে পরে আছে প্রণব। বাপ্পাদিত্যকে খবর দেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে তিনি এসে পুলিশকে খবর দেন। বাপ্পাদিত্য বলেন, “বাবার শরীর ভাল ছিল না। মদ কেনার টাকার জন্য ভাই প্রায়ই বাবা-মাকে মারধর করত। মঙ্গলবারও মারধর করেছে বলে জানতে পারছি।”

পুলিশ মৃতদেহ বার করে নিয়ে যাওয়ার পরে শুক্লা ফের বাড়ির গ্রিলে তালা দিয়ে দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন। পড়শিরা ডাকাডাকি করলেও খোলেননি। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই বলেন, “ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোটা বিষয়টি জানার চেষ্টা হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar Oldman Died
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy