মনকে শক্ত করে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা কেন্দ্রে যান। পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা শেষে শেষকৃত্য হয় নিশার বাবার। — নিজস্ব চিত্র।
উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজি পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরীক্ষার আগের দিন, বুধবার সন্ধ্যায় এক ফোনে জীবন বদলে গেল নিশা দাসের। হঠাৎ বাড়ির সদস্যদের কান্না। ছুটে গিয়ে জানতে পারলেন, তাঁর বাবা আর বেঁচে নেই। তা বলে বাবার স্বপ্নও বাঁচবে না! মানতে পারেননি নিশা। মনকে শক্ত করে পরের দিন, বৃহস্পতিবার পরীক্ষা কেন্দ্রে যান। পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা শেষে শেষকৃত্য হয় নিশার বাবার। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের ঘটনা।
শামশেরগঞ্জের কাঞ্চনতলা জেডিজে ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেন নিশা। বাবার শেষ ইচ্ছে ছিল মেয়ে বড় হয়ে নার্স হবে। সেই ইচ্ছাপূরণে খামতি রাখতে চাননি নিশা। তাই বাবার মৃত্যুর খবর জেনেও ভেঙে পড়েননি। স্কুলের ইউনিফর্ম গায়ে দিয়ে সময় মতো পৌঁছে যান পরীক্ষা কেন্দ্রে। পরীক্ষা শেষে আর নিজেকে সামলাতে পারেননি। কান্নায় ভেঙে পড়েন নিশা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরাক্কার মামরেজপুরের শিবপুর গ্রামে থাকেন নিশারা। তাঁর বাবা বিকাশচন্দ্র দাস ছিলেন পেশায় ব্যবসায়ী। গুরুতর অসুস্থ ছিলেন তিনি। বেঙ্গালুরুতে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। বুধবার রাতে মৃত্যু হয় বিকাশের। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বুধবার রাতেই দেহ নিয়ে রওনা দেন নিশার পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার সকালে নিশাদের বাড়িতে পৌঁছে যায় তাঁর বাবার দেহ। দেখে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন নিশা। তখন বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন নিশার মা। এর মধ্যেই নিজেকে সামলে নেন নিশার মা। ১৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে চাচণ্ড বাসুদেবপুর জালাদিপুর হাইস্কুলে পৌঁছে যান উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিতে।
নিশার এই অদম্য জেদকে কুর্নিশ জানিয়েছেন তাঁর শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বাসুদেবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মিজাউর রহমান বলেন, ‘‘এমন উদাহরণ যেন কখনও না হয়। তবে মেয়েটি ব্যতিক্রমী মনের জোরের পরিচয় দিল। ওর বাবার শেষ ইচ্ছে যেন পূরণ করতে পারে।’’ পরীক্ষা শেষে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি নিশা। সহপাঠীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যান। পরে নিশা জানিয়েছেন, ‘‘বাবা চেয়েছিলেন, সম্মানের সঙ্গে সমাজে মাথা উঁচু করে চলি। তার জন্য পড়াশোনা থামতে দিলে হবে না। তাই কষ্ট যতই হোক, বাবার ইচ্ছা পূরণে আমি সব কিছু করতে পারি। বাবাকে পাব না, কিন্তু বাবার ইচ্ছেগুলি পূরণ হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy