অক্টোবরের শেষে ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’ পর আর বৃষ্টির মুখ দেখেনি নদিয়া। সাম্প্রতিক কালের অন্যতম দীর্ঘ বর্ষা মরসুমে নাজেহাল হওয়ার পর গোটা শীত কেটেছে বৃষ্টিহীন। প্রায় সাড়ে তিনমাস পর ফের বৃষ্টির মেঘ ঘনাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার সঙ্গে নদিয়ার আকাশেও।
হাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তি জানাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত প্রচুর জলীয় বাষ্পের প্রভাবে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিপাতের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যার প্রভাবে বুধ এবং বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। তবে নদিয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
তবে মাঠ ভরা ফসলের মরসুমে এই বৃষ্টির পূর্বাভাসে চাষিদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। মুসুর, সরষে, পিঁয়াজের মতো যে সব রবিশস্য এখন তোলার মুখে। সেই সব চাষিরা উদ্বিগ্ন বৃষ্টির খবরে। আবার বোরো ধান কিংবা আম, লিচুর কারবারিরা ভীষণ ভাবে চাইছেন বৃষ্টি হোক। যদিও আবহাওয়াবিদ থেকে সরকারি কৃষিকর্তা সকলেই আশ্বস্ত করছেন, এই বৃষ্টিতে ভাল হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। মুখ্য কৃষি আবহাওয়াবিদ মৃণাল বিশ্বাস বলেন। “বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিরাট কিছু বৃষ্টির পূর্বাভাস নদিয়ার ক্ষেত্রে নেই। তাই এখনই চাষিদের আশঙ্কার কারণ নেই।”
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শীতের মরসুমে স্বাভাবিক যে বৃষ্টি তা হয়নি বললেই চলে। ডিসেম্বরে যৎসামান্য এবং জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টিপাত শূন্য নদিয়ায়। কৃষি আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ায় ডিসেম্বর মাসে যেখানে ১৬.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। সেখানে এবার হয়েছে মাত্র ১.৭ মিলিমিটার। জানুয়ারি মাসে ৮.৫ মিলিমিটার এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮.৮ মিলিমিটারের জায়গায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শূন্য। ফলে সার্বিক ভাবে একটু বৃষ্টি দরকার। রুইপুকুর, মায়াপুরের চাষিরা জানাচ্ছেন বৃষ্টি না হওয়ায় এবার শীতকালীন যাবতীয় ফসল উপচে পড়েছে। আনারুল শেখ বলেন, “এবার আবহাওয়া বেশ ভাল ছিল। গাছে কোনও রোগ বা পোকার আক্রমণও হয়নি। তাই আনাজের ফলনও প্রচুর। বেশি ফলনের কারণে বাজারে দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ভাল আবহাওয়ায় আমাদের অনেক লোকসান হয়ে গেল।”
নদিয়ার-সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষের আশ্বাস, “এই বৃষ্টি তেমন কোনও প্রভাব ফেলবে না চাষে। অন্তত এখনও পর্যন্ত আবহাওয়ার দফতরের নির্দেশিকা তাই বলছে। তবে যদি বৃষ্টি হয়, তবে জমিতে জল জমে গেলে সমস্যা হতে পারে। কেননা বেশির ভাগ ফসল এখন তৈরি। সবার আগে জমিতে জমা জল বের করে দিতে হবে। তবে বোরো ধান এবং আম, লিচু, কাঁঠালের মতো গ্রীষ্মকালীন ফলের জন্য হালকা বৃষ্টি খুবই কাজের হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)