ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। (ইনসেটে) তুহিন। ছবি: প্রণব দেবনাথ
রক্তাক্ত অবস্থায় কেন অতক্ষণ রাস্তায় পড়ে রইলেন বিসর্জনের রাতে হাঁসুয়ার কোপে মারাত্মক জখম যুবক, কেন আগেই তাঁকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া গেল না, কেন দীর্ঘক্ষণের রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হল, সেই প্রশ্নই তুলছে তাঁর পরিবার। ঘটনার সময়ে সুজিতের সঙ্গে থাকা দুই বন্ধুর ভূমিকা নিয়ে যেমন তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, প্রশ্ন উঠছে ওই রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে রাস্তায় থাকা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
বুধবার মাঝরাতে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পথে চৌরাস্তার মোড়ের কাছে একটি সরু রাস্তায় হাঁসুয়া দিয়ে কোপানো হয় নেদেরপাড়া আলিঙ্গন ক্লাবের সদস্য, দমকল কর্মী তুহিনশুভ্র বসুকে। তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, মোড়ে সাং নামিয়ে ওই রাস্তায় ঢুকে মদ খাওয়ার সময়ে স্থানীয় কিছু যুবকের সঙ্গে গোলমাল হয়েছিল ওই ক্লাবের ছেলেদের। সেই গোলমালের কথা না জেনে দুই বন্ধুর সঙ্গে তুহিন ওই রাস্তায় গেলে অপর পক্ষ হাঁসুয়া নিয়ে তেড়ে আসে। দুই বন্ধু পালালেও তুহিন দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন।
তুহিনের ওই দুই বন্ধু সুজিত পাল ও কুমারজ্যোতি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে তাঁর পরিবার। বৃহস্পতিবার তুহিনের ভাই অর্কশুভ্র বসু বলেন, “দাদার সঙ্গে থাকা দুই বন্ধুর ভূমিকা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাদের বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে।” তবে সুজিতের দাবি, “আমরা গোলমালের কথা কিছুই জানতাম না। প্রস্রাব করার জন্য ওই রাস্তায় যেতেই কিছু ছেলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে। আমরা হাতজোড় করে কোনও মতে পালিয়ে আসি। আমাদের পিছনে যে তুহিন ছিল সেটা খেয়াল করিনি।”
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, কোপ খেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ২৫-৩০ মিনিট পড়েছিলেন তুহিন। তাঁকে তুলে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে ৪০-৪৫ মিনিট লেগে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। প্রথমেই যদি তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত, তা হলে হয়তো প্রাণ বাঁচানো যেত বলে তাঁরা মনে করছেন। তবে সুজিতের দাবি, “ওকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেই আমরা টোটোয় চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই।” দুই বন্ধুকেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নেদেরপাড়ার বাড়িতে তুহিনের বাবা-মা, ভাই ছাড়াও স্ত্রী ও বছর আটেকের ছেলে রয়েছে। তুহিনের স্ত্রী মৌসুমি বলেন,“আমরাও ভাসানের শোভাযাত্রা দেখতে গিয়েছিলাম। থানার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনই ওর এক বন্ধু আমাকে ফোন করে খবর দেয়। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে ওর মতো নিরীহ ভদ্রলোককে কেউ এ ভাবে মারতে পারে!” তাঁদের সকলেরই প্রশ্ন রয়েছে তুহিনের সঙ্গে থাকা ক্লাবের ছেলেদের ভূমিকা নিয়ে। এ দিন সকাল থেকেই ক্লাব বন্ধ ছিল। ক্লাব সদস্য সন্দীপন চৌধুরী বলেন, “রাস্তার মুখে প্রতিমা রেখে আমরা সবাই বাঁধাবাঁধির কাজে করছিলাম। সেখান থেকে একটু দূরে ঘটনাটা ঘটে। প্রথমটায় আমরা কেউ জানতে পারিনি। "
কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল বলেন, “তদন্তে আমরা এক যুবকের নাম জানতে পেরেছি। তল্লাশি চলছে। তাকে গ্রেফতার করলেই খুনের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।” খোড়োপাড়ার বাসিন্দা ওই যুবকের স্ত্রী ও শাশুড়িকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে অনেক রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তুহিন যখন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন, রাস্তায় থাকা পুলিশকর্মীরা কী করছিলেন?
পুলিশ সুপার বলেন, “ওটা শোভাযাত্রার রুট ছিল না। পাশের একটা সরু রাস্তায় ঘটনাটা ঘটেছে। সেখানে পুলিশ থাকার কথা খবর পেতেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। তবে পুজো কমিটির লোকেরা কেন এত দেরিতে পুলিশকে খবর দিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy