পাড় ভেঙে ঘরের দুয়ারে ভাগীরথী। নিজস্ব চিত্র।
গত বর্ষায় ভাঙনের ক্ষয়ক্ষতির রেশ এখনও কাটেনি। ফের এল আর এক বর্ষা। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও নদীর জলের তোড়ে ফের উঁকিঝুঁকি মারছে ভাঙন। আর তাতেই ঘুম ছুটেছে গঙ্গা পাড়ের বাসিন্দাদের। ফরাক্কার কুলিদিয়ারে ফের ফুঁসছে নদী। ভাঙন ফের শুরু হয়েছে শমসেরগঞ্জের ধানঘরা, হীরানন্দপুরেও।
গত বছরের স্মৃতি ফের যেন ফিরে আসছে কুলিদিয়ারে। এই অগস্টের প্রথম সপ্তাহেই মাঝ রাতে তিন ঘণ্টায় ৩৩টি পাকা বাড়ি ধসে পড়েছিল গঙ্গায়। কোনওটিতে টিনের ছাউনি, কোনওটিতে অ্যাসবেস্টসের। নারায়ণ মণ্ডল, সুনীল মণ্ডল, ছেদু মণ্ডল, অর্জুন মণ্ডল, সুকেশ মণ্ডল, হরিলাল, গীতা, মমতা, সাগরদ্বীপ সহ অন্তত ৩৩টি পরিবার ভাঙনে ঘর হারিয়ে নদী পাড় ছেড়ে ফের বসতি গড়েছেন গ্রামের মধ্যে।
রবিবার সকাল থেকেই কুলিদিয়ারে ভাঙনের আতঙ্কে নদী পাড়ের বাসিন্দারা তাদের বাড়ি ঘর ভাঙতে শুরু করেছেন। অন্তত ৩০টি নদীর পাড় লাগোয়া বাড়ি ভেঙে ইট, কাঠ, আসবাব সহ সব সামগ্রী সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সুজাপুরে গ্রামের ভিতরের দিকে।
নদী পাড়েই বাড়ি বিকাশ সরকারের। পেশায় মৎস্যজীবী। বলছেন, “গত বর্ষায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গ্রামের। নদীতে ধসেছে বহু মানুষের ঘর। তাই ঝুঁকি নিই কী করে? শনিবার থেকেই আমরা ঘর ভাঙতে শুরু করে সুজাপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতেই গিয়ে মালপত্র রাখছি। তারপর যেদিকে দু চোখ যায় চলে যাব। তবে আর নদী পাড়ে নয়।”
তপেশ মণ্ডলও নদীর এই অবস্থা দেখে ঘুমোতে পারছেন না শনিবার থেকে। বলছেন, “ নদী বেশ শান্তই ছিল। নদীর মাঝ বরাবর গজিয়ে ওঠা চরাটি এবারে কাটতে শুরু করায় ভেবেছিলাম এবার চরা কেটে গিয়ে বাঁ পাড় হয়ত বেঁচে যাবে। সেই ভরসাতেই ছিলাম। কিন্তু আর ভরসা নেই। তাই সকাল থেকে দরজা, জানালা, টিন খুলে নিতে শুরু করেছি।”
অমল মণ্ডল বলছেন, “এমনিতেই কোনও রোজগার বলতে নেই। মাছ ধরাও বন্ধ। ভরা নদীতে বড় জাল ছাড়া মাছ মেলে না। দু’দিন থেকেই নদীর জল বাড়ছে। জলের তোড়ে ভাঙছে পাড়। বাড়ি থেকে ১০ হাত দূরে নদী। বিডিও এসেছিলেন ভাঙন দেখতে। কিন্তু কোনও আশ্বাস দেন নি। তিনিও দেখে গেছেন আমাদের ঘর বাড়ি ভাঙতে।নদীর পাড় থেকে সরে যেতে বলেছেন তারা। কিন্তু কোথায় যাব ?”
ফরাক্কার নয়নসুখ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুলেখা মণ্ডল জানান, শনিবার দুপুর তিনটে থেকে নদীর বাঁ পাড় বরাবর প্রায় ৩০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে মেঘনাথ মণ্ডল পাড়া, নারায়ণ মণ্ডল পাড়া, খাসপাড়া, সায়েদ আলি পাড়া ও পার সুজাপুর এলাকায়। কুলিদিয়ারের মূল এই সব পাড়ার বসতি লম্বা ভাবে নদীর পাড় বরাবর গিয়েছে। বাড়ি ঘর ধসে না পড়লেও গঙ্গার পাড় থেকে এই সব এলাকার বসতি মাত্র ৫/৬ মিটার দূরে। স্বভাবতই গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক বেড়েছে কুলিদিয়ারে।
ফরাক্কার ভারপ্রাপ্ত বিডিও সন্দীপন প্রামাণিক বলেন, “সেচ দফতরকে বলেছি যেখানে ভাঙন হচ্ছে সেখানে বালি বোঝাই বস্তা ফেলতে, যাতে ভাঙনটাকে ঠেকানো যায়। কাজও শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে স্থায়ী কাজ করতে সেচ দফতর একটি প্রকল্প পাঠিয়েছে। সরকারি অনুমোদন মিললে সে কাজ করা হবে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের সতর্ক রাখা হয়েছে। সে রকম পরিস্থিতি হলে নদীর পাড় থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। তবে বাড়ি ঘর ভেঙে নদীর পাড় থেকে সরে যেতে দেখলাম অনেককেই।”
রাজ্যের ভাঙন প্রতিরোধ দফতরের রঘুনাথগঞ্জের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ার কল্পরূপ পাল জানান,এখন কিছুই করার নেই। বালি বোঝাই বস্তা পাড় বরাবর ফেলে জলের ধাক্কাকে যতটুকু ঠেকানো যায়। স্থায়ী কাজ শুরুর অনুমোদন পেলে যা হয় করা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy