—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হল। সরকারের দাবি, এর ফলে দেশের সর্বোচ্চ আইনসভার মাধ্যমে মেয়েদের ক্ষমতায়নের সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু সংশয় দেখা দিয়েছে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন ঘিরে। অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রাজ্যের পঞ্চায়েত স্তরে এখনও বহু জায়গাতেই মহিলা জনপ্রতিনিধিদের হয়ে কাজ সামলাচ্ছেন তাঁদের স্বামীরা। আবার, উল্টো উদাহরণও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই মহিলা নেত্রীরা রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দাপটের সঙ্গে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ পরিচালনা করছেন। তবে গ্রামীণ স্তরের রাজনীতি ব্যবস্থায় এই বৈপরীত্যের দেখা মিলছে কম-বেশি সর্বত্রই।
গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ পঞ্চায়েত ব্যবস্থার তিনটি স্তরে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ চালু হয়েছে বহু আগেই। অনেক জায়গাতেই শুধু সাধারণ সদস্য হওয়ার পাশাপাশি প্রধান, সভাপতি, সভাধিপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলে আসছেন মহিলারা। কিন্তু অনেক জায়গাতেই আসন সংরক্ষণের কোটা পূরণ করতে মহিলাদের সেই পদে বসানো হচ্ছে ঠিকই। তবে তাঁদের স্বামী বা বাড়ির পুরুষ ‘অভিভাবক’ই কার্যত মেয়েটির কাজ করে দিচ্ছেন, এমন উদাহরণ কম নয়।
যেমন, শান্তিপুরের বাবলা পঞ্চায়েতের গত বোর্ডের প্রধান ছিলেন উন্নতি সর্দার। তিনি আগে রাজনীতির মধ্যে ছিলেন না। তাঁর স্বামী সুনীল সর্দার আগে থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন সুনীল। গত বার পঞ্চায়েতে তাঁদের আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় স্ত্রীকে ভোটে দাঁড় করান। প্রধান হন। কিন্তু সদ্য রাজনীতিতে পা রাখা স্ত্রীকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বারবার এগিয়ে আসতে হয়েছে স্বামীকেই। সুনীল বলছেন, ‘‘আমার স্ত্রী তো কোনও দিন রাজনীতিই করেনি। আমি রাজনীতি করতাম। আসন সংরক্ষণের কারণে স্ত্রীকে ভোটে দাঁড় করাতে হয়। ও তো একা কাজ করতে পারত না। আমায় সাহায্য করতে হত। আমিই করে দিতাম।’’
কালীগঞ্জে দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অর্পিতা রায়চৌধুরী দে-র কাজ সামলান মহিলা প্রধানের স্বামী বাবুসোনা দে, এমনই অভিযোগ। যদিও বাবুসোনার দাবি, ‘‘আমি শুধু দলের সাংগঠনিক কাজটাই করি, স্ত্রী প্রধানের কাজ করেন। তবে মহিলারা যত বেশি এগিয়ে আসবেন, তত এই প্রবণতা কম হবে।’’
এছাড়াও অভিযোগ, অনেক জায়গাতেই যেখানে মহিলারা পঞ্চায়েতের প্রধান বা উপপ্রধান পদে বসেছেন, সেখানে পঞ্চায়েত দফতরে সারাক্ষণই দেখা মেলে তাঁদের স্বামীদের! আর সদ্য রাজনীতিতে পা রাখা মেয়েটিও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের ক্ষেত্রে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন ঘরের পুরুষের উপরে। অন্য দিকে, সাধারণ মানুষও অভ্যস্ত হয়ে যান মহিলা প্রধানের বদলে তাঁর স্বামীর কাছেই নিজের অভাব-অভিযোগ জানাতে। যেমনটা দেখা গিয়েছিল পর্দার ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজে।
তবে বিপরীত ছবি যে একেবারে নেই, এমন নয়। গ্রামীণ স্তরে বহু জায়গায় বিভিন্ন দলের এমন অনেক নেত্রী আছেন, যাঁরা দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করে আসছেন। পঞ্চায়েত পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁরাই কাজ চালাচ্ছেন। নদিয়া জেলা পরিষদের পর-পর দুই বারের বোর্ডে সভাধিপতি হয়ে বসেছেন দুই মহিলা নেত্রী— রিক্তা কুন্ডু, তারান্নুম সুলতানা মীর। তাঁরা দু’জনেই রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। রানাঘাট ১ ব্লকের বারাসত পঞ্চায়েতে দীর্ঘ দিন প্রথমে উপপ্রধান এবং বর্তমানে প্রধান পদে রয়েছেন তৃণমূল রানাঘাট ১ ব্লকের সভাপতি শেফালী বিশ্বাস। তবে এই ছবিগুলি ব্যতিক্রমই। পঞ্চায়েত স্তরেএখনও মহিলা জনপ্রতিনিধিরা নির্ভরশীল বাড়ির পুরুষটি উপরেই।
তৃণমূল রানাঘাট সংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমরা সব রকম ভাবেই মহিলাদের এগিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ করছি। কোথাও যদি কারও কাজের ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতা বা সমস্যা থাকে, তা হলে তাঁকে দলের তরফে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নেওয়া হয়।’’
সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুমিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ স্তরে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করা ছাড়া অন্য উপায় নেই।’’
বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার বলেন, ‘‘যাঁরা নতুন পদাধিকারী হচ্ছেন, সরকার ও প্রশাসনের উচিত— তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা। না হলে এগুলি চলতে থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy