প্রতীকী চিত্র।
মাস চারেক আগে করোনা আতঙ্কে ভিন রাজ্য থেকে গাটের কড়ি খরচ করে ঘরে ফিরেছিল ওরা। মাস দুয়েক ঘরে থেকেই পেটের টানে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে ফিরতে হয়েছে আবারও ভিন রাজ্যে। আর ইদের কিছুদিন আগে ভিন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার ফলে এবারের ইদে আর ঘরে ফেরা হচ্ছে না তাদের। তাছাড়া খুব কম সময়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার ফলে বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারছে না ইদের জন্য। ফলে সব মিলিয়ে এবারের ঈদে বিষাদের সুর জেলার গ্রামে গ্রামে।ৃ
জলঙ্গির শরিফুল মালিথ্যা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর সময় লকডাউনের আশঙ্কায় ফিরে এসেছিলেন গ্রামে। ভেবেছিলেন এলাকায় কাজ করেই সংসার চালাবেন, কিন্তু মাস দুয়েক ঘরে থাকার পরে বুঝে গিয়েছিলেন উপায় নেই, পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা খাবার তুলে দিতে গেলে যেতে হবে ভিন রাজ্যে। শরিফুলের কথায়, "অনেক কষ্ট করে ঘরে ফিরেছিলাম কেরল থেকে, কোনক্রমে বাসের ভাড়াটা জোগাড় করে ঘরে ফিরে ভেবেছিলাম এলাকায় কাজ করেই সংসার চালাব। কিন্তু বাস্তবে সেটা আর হয়ে ওঠেনি, কাজ না মেলায় মাসখানেক আগে আবারও ফিরে এসেছি কাজের খোঁজে কেরলে। ফলে এবারের ঈদে ঘরে ফেরা হচ্ছে না।"
হরিহরপাড়ার শ্রীপুর গ্রামের হামিদ মোল্লা, নজরুল শেখ, বলরামপুর গ্রামের গিয়াসুদ্দিন শেখরা কেউ দু'বছর, কেউ আবার তারও বেশি দিন ধরে রয়েছেন সৌদি আরবে। মঙ্গলবার সৌদি আরবে ইদ পালিত হয়েছে ইদের নমাজ শেষে ভিডিয়ো কলে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন গিয়াসুদ্দিন, হামিদ, নজরুলরা। হামিদের স্ত্রী মেনুকা বিবি বলেন, ‘‘ইদের আগে ঘরে ফেরার কথা ছিল। করোনার জন্য তা হয়নি। ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে সৌদিতেই আছে। দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে আছি। পরিবারের কর্তা প্রবাসে পড়ে থাকে। দু'বছর ধরে ইদের আনন্দটাও আমাদের উবে গিয়েছে।’’
ডোমকলের সাইদুল মণ্ডলের, সেও দিন কুড়ি আগে রওনা দিয়েছে কেরলে। সেখান থেকেই ফোনে আক্ষেপ তার, ‘‘ইদে ঘরে ফেরা হবে না সেটা জেনেই ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলাম, কিন্তু এখানে এসেও যে ইদের জন্য ঘরে কিছু টাকা পাঠাতে পারবোনা সেটা ভাবিনি। নিয়মিত কাজ জুটছে না, যে কাজটা জুটছে তা থাকা খাওয়াতেই শেষ। পরিস্থিতি কবে বদলাবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’’ ডোমকলের পরিযায়ী শ্রমিক আব্দুল ওয়াহেদ প্রতিবছর বকরি ইদে ঘরে ফেরেন ভিন রাজ্য থেকে। এবছর আর ঘরে ফেরা হচ্ছে না তার। মা নাজিফা বেওয়া বলছেন, "বছরে এই দিনটাতে অন্তত ঘরছাড়া থাকেনি ছেলেটা, এই প্রথম বকরি ইদের সময় ও বাইরে থাকল। কি করে ইদের আনন্দ গায়ে মাখবো বলছেন।’’
ইদ মানেই আনন্দ। হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের পথ চেয়ে থাকা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে ছবিটা। বাড়ির ছেলেরা ফিরছেন না। টাকাও পাঠাচ্ছেন না। এ বছর আর কোনও পরিবার পথ চেয়ে নেই পরিবারের কর্তার ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। ডোমকলের কুপিলা গ্রামের এক পরিযায়ী শ্রমিক এর স্ত্রী বলছেন ‘‘দুঃখ কষ্ট আমাদের কপালে লেখা আছে। ফলে সেটা সহ্য করার ক্ষমতাও আছে। কিন্তু বছরে ইদের দিনটাতে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে বাবা থাকবে না এটা যেন মেনে নিতে পারছিনা। ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা। এখন মনে হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি ইদের দিন কেটে যায় ততই ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy