ফর্ম জমা না দিতে পেরে হতাশা। সোমবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
দুপুর ১টা নাগাদ টোটো থেকে নেমে হাতে হাতে ব্যাগ ঝুলিয়ে দৌড়তে দৌড়তে কল্যাণী ব্লক অফিসে হাজির বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। কিন্তু এসেই দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের কাছে শোনেন, ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের ফর্ম আর জমা নেওয়া হবে না।
গলা খাঁকরে ব্লক অফিসের এক কর্মী বলে দেন, ‘‘দেওয়ালে তো লিখে দেওয়া হয়েছে। দেখে নিন।’’ ‘ফর্ম জমা নেওয়া হবে না’ বলে মাঝে-মধ্যে ঘোষণাও হচ্ছে মাইকে। সব শুনে হতাশ প্রৌঢ় বলেন, “লকডাউনের কারণে একেই ট্রেন চলছে না। অনেক কষ্টে এখানে এসেছি। আগে জানতে পারলে এভাবে হয়রান হতে হত না। টাকাটা বেকার গেল!”
রাজ্য সরকারের ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের ফর্ম জমা নেওয়ার জন্য কল্যাণী ব্লক অফিসে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য আলাদা কাউণ্টার খোলা হয়েছিল সোমবার সকালেই। ফর্ম জমা নেওয়ার কাজও শুরু হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরে কাজ স্থগিত করে দেওয়া হয়।
চাকদহ ব্লক অফিসে শুধু তাতলা ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ফর্ম জমা নেওয়ার জন্য দিন স্থির করা হয়েছিল। ওই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য চারটি কাউন্টার খোলা হয়েছিল। রানাঘাট ১ নম্বর ব্লকে ফর্ম নেওয়ার জন্য একাধিক কাউন্টার খোলা হয়েছিল। সেখানেও ঘণ্টাখানেক ফর্ম জমা নেওয়া হয়। তার পরে বন্ধ। একই ছবি রানাঘাট ২ ব্লকেও। সেখানে প্রতিটি পঞ্চায়েতের জন্য দু’টি করে কাউণ্টার খোলা হয়।
এ দিন সকাল ১০টার পর থেকে সব জায়গায় শ’য়ে-শ’য়ে লোকের ভিড় জমে। কিন্তু যাঁরা ফর্ম জমা দিতে এসেছিলেন, তাঁদের অনেকে নিরাপদ পারস্পরিক দূরত্ব মানছিলেন না। অনেকের মুখে মুখাবরণও ছিল না। শান্তিপুর ব্লক অফিসে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য পাঁচটি কাউন্টার খোলা হয়েছিল। শুরু থেকেই বেশ ভিড় হয়েছিল।
করিমপুর ১ ব্লক অফিসে আবার আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য আটটি আলদা বাক্স রাখা হয়েছিল। বেশ কিছুক্ষণ ফর্ম জমা পড়ে। করিমপুর ২ ব্লক অফিসে অবশ্য ভিড় কিছুটা কম ছিল। সেখানেও দশটি পঞ্চায়েতের জন্য আলাদা বাক্সের বাব্যস্থা করা হয়েছিল। এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “লকডাউনের কারণে দূরের গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেক মানুষ ব্লক অফিসে যেতে পারেননি। বেশি খরচ করে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনই অনেকে এক সঙ্গে টোটোয় চেপে গেলে পুলিশ বাধা দিতে পারে। তাঁরা পঞ্চায়েত অফিসে গিয়েছিলেন।”
নবদ্বীপ ব্লকে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং শহরের মানুষ ফর্ম জমা দেওয়ার জন্য প্রথম দিকে সামান্য ভিড় করেছিলেন। ফর্ম স্থগিত হওয়ার খবর আসার পরে ভিড় হালকা হয়ে যায়। এঁদের অনেকেই জেরক্সের দোকান থেকে ১, ২ এবং ৫ টাকা দাম দিয়ে ফর্ম কিনেছিলেন। কৃষ্ণনগর ১ এবং ২, চাপড়া এবং হাঁসখালি ব্লকেও যথেষ্ট ভিড় হয়েছিল। কেন পঞ্চায়েত অফিসে ফর্ম জমা নেওয়া হবে না, এই প্রশ্ন তুলে কিছু লোকজন কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের পোড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতে অফিসে ক্ষোভ প্রকাশও করেন।
তেহট্ট ব্লক অফিসেও এ দিন দীর্ঘ লাইন পড়ে। তেহট্টে পুলিশের তরফে ব্লক অফিসের সামনে চুন দিয়ে গোল গোল দাঁড়ানোর জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে ভিড় বাধ মানেনি। ঘটনাচক্রে, কিছু দিন আগেই সিপিএম ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, এ ভাবে ফর্ম জমা নিলে লকডাউন বিফলে যাবে। পঞ্চায়েত অফিসে ফর্ম নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। প্রশাসন সেই কথা কানে তোলেনি। এ দিন তাই তারা বিক্ষোভ দেখায়।
শেষে বিডিও অচুত্যানন্দ নিজেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে বিলি হওয়া ফর্ম ফিরিয়ে নেন। তেহট্ট মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষ দূরত্ব বজায় না রেখে ভিড় করেছিলেন। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। শেষে ফর্ম জমা নেওয়া হবে না শুনে তারা লোকজন হয়রান হয়ে ফিরে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy