Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Drug dealer arrested

‘মাসি’ না-বললে গলবে না মাছিও! পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে মাদক কারবারের কিংপিন মুর্শিদাবাদের গায়ত্রী ধৃত

পুলিশ সূত্রে খবর, গোপন সূত্রে খবর মিলেছিল, অসমের গুয়াহাটি থেকে দুই সঙ্গীকে নিয়ে একটি চারচাকার গাড়িতে করে মুর্শিদাবাদ পেরিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে নদিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছেন গায়েত্রী।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রণয় ঘোষ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:১০
Share: Save:

অসম হোক কিংবা মণিপুর, পশ্চিমবঙ্গ কিংবা ওড়িশা, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মাদকজালে মাছি গলার উপায় ছিল না ‘মাসি’র অনুমতি ছাড়া! অশান্ত মণিপুর থেকে মাদক সরবরাহের ঘাটতি মেটাতে পুরনো রুটগুলি সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত তাঁরই ছিল। কোথা থেকে কাঁচামাল আসবে, ওয়ার্কশপের ঠিকানাই বা কী হবে, কোন পথে ক্যারিয়ার হয়ে পৌঁছে যাবে গ্রাহকদের কাছে মাদক— পাচার চক্রের কার্যত সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন সত্তরোর্ধ্ব ‘গায়ত্রী মাসি’। গোয়েন্দারা অনেক দিন ধরেই তক্কে তক্কে ছিলেন। বেশ কয়েক বার সুযোগও এসেছিল। কিন্তু কোনও ভাবেই বাগে আনা যাচ্ছিল না তাঁকে। কিন্তু সম্প্রতি ডেরা বদলাতে গিয়েই বিশেষ তদন্তকারী দল (এসটিএফ)-এর জালে ধরা পড়লেন মাদক পাচারের পাণ্ডা মুর্শিদাবাদের গায়ত্রী হালদার। তাঁর সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন আরও দু’জন। তল্লাশি চালিয়ে ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকার নিষিদ্ধ মাদক ‘মরফিন’ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে এসটিএফ সূত্রে খবর।

গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পেয়েছিল, অসমের গুয়াহাটি থেকে দুই সঙ্গীকে নিয়ে একটি চার চাকার গাড়িতে করে মুর্শিদাবাদ পেরিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে নদিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছেন গায়ত্রী। সেই খবর পাওয়ামাত্রই বুধবার সন্ধ্যা থেকে বহরমপুর জাতীয় সড়ক লাগোয়া নওদাপাড়া এলাকা ঘিরে ফেলেন তদন্তকারীরা। পরে রেলগেটের কাছে একটি গাড়ি দেখে সন্দেহ হয় তাঁদের। সেটি আটকে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন, ভিতরে ‘গায়ত্রী মাসি’! সঙ্গে আরও দুই শাগরেদ। তাঁরা হলেন— নদিয়ার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ এবং সোহাল শেখ। তাঁদের কাছ থেকে প্রায় এক কেজি মরফিন পাওয়া গিয়েছে। যার বাজারমূল্য অন্তত এক কোটি টাকা। এসটিএফ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রকে গ্রেফতার করা হয়। তিন জন ছাড়াও এই চক্রে আরও কারা যুক্ত, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট মাদক আইনে ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

‘গায়ত্রী মাসি’র গ্রেফতারিকে বড় সাফল্য হিসাবে দেখতে চাইছে পুলিশ মহলের একাংশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃদ্ধার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক দিন ধরেই অবগত ছিলেন গোয়েন্দারা। তাঁকে জেরা করে আরও বেশ কিছু নতুন তথ্যও মিলেছে। পুলিশের দাবি, জেরার সময় গায়ত্রী স্বীকার করেছেন, উত্তর-পূর্বের ডেরা বদলে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া একটি গ্রামে নতুন ডেরা করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কী ভাবে গোটা সিন্ডিকেটের দখল নিলেন বৃদ্ধা, পরিচালনায় আর কে কে সহযোগিতা করতেন— এই সব বিষয়ে তথ্য পেতে চাইছেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্য, এমনকি বাংলাদেশেও মাদক তৈরির কাঁচামালের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতেন গায়ত্রী। হেরোইন, ব্রাউন সুগারের মতো বহুমূল্য মাদক তৈরি করে উত্তর-পূর্বের রাজ্য, পূর্বের ওড়িশা ও বাংলাদেশ পর্যন্ত সরবরাহের বিরাট নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

কিন্তু হঠাৎ ডেরা বদলের সিদ্ধান্ত কেন? পুলিশ সূত্রে খবর, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ায় গোয়েন্দাদের সক্রিয়তা বেড়েছে। উত্তর-পূর্ব থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় আসা গাড়িগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নাকা চেকিংও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরদারি এড়িয়ে সেখান থেকে মাদক পাচার করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল গায়ত্রীকে। নদিয়ার জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের পুরনো মাদক হাবগুলিকে ফের সক্রিয় করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। এ ছাড়াও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কাঁচামাল পাঠিয়ে মাদক তৈরি করে এ পারে সরবরাহের পরিকল্পনা ফেঁদেছিলেন বৃদ্ধা। তার আগেই এসটিএফের গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Drug arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy