Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

তিনি ঝাঁট দেন, রোগীও দেখেন

মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর থানার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনিই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, তিনিই ফার্মাসিস্ট, তিনিই চিকিৎসক এবং তিনিই অগতির গতি!

রোগী দেখছেন রামনগর-বাছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক সন্তোষকুমার বিশ্বাস। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

রোগী দেখছেন রামনগর-বাছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক সন্তোষকুমার বিশ্বাস। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০৪:১৫
Share: Save:

ঘড়ির কাঁটায় সকাল ন’টা। বাইরে থিকথিক করছে রোগীর ভিড়। চিকিৎসক আসবেন একটু পরেই। ঠিক তখনই গটগট করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকলেন এক প্রৌঢ়। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। পরনে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট। বুকপকেট থেকে উঁকি মারছে স্মার্ট ফোন। আর হাতে একটা পেল্লাই ঝাঁটা!

চিকিৎসক কখন আসবেন? ঝাঁট দিতে দিতেই উত্তর দিলেন তিনি, ‘‘অপেক্ষা করুন। খুব শিগ্‌গির এসে পড়বেন!’’ পাশে দাঁড়ানো এক রোগী বেশ অবাক হয়ে বললেন, ‘‘উনিই তো এখানকার ডাক্তার গো!’’

একটু পরেই তিনি রোগীদের ভিড় ঠেলে ঘরে ঢুকলেন। হাতে ঝাঁটাটা নেই। গলায় উঠে এসেছে স্টেথো। ঠোঁটে অমায়িক হাসি, ‘‘খুব জরুরি না হলে একটু বসুন। ওঁরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছেন।’’ তিনি সন্তোষকুমার বিশ্বাস, রামনগর-বাছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক। মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর থানার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনিই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, তিনিই ফার্মাসিস্ট, তিনিই চিকিৎসক এবং তিনিই অগতির গতি!

একা হাতে এত সব কী করে সামলান?

উত্তর নয়, পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন সন্তোষবাবু, ‘‘বাড়িতে কেউ না থাকলে আপনি একা কী করে সামলান?’’ পরে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার অবস্থাও তেমনই। কিন্তু নেই, নেই বলে অনেক অভিযোগ হয়তো করা যাবে। কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন এখানকার স্থানীয় লোকজন। সেই কারণেই আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব সেটা করি।’’

তাই বলে ঝাঁটটাও আপনাকে দিতে হয়? চোখ থেকে চশমাটা খুলে সন্তোষবাবু হাসেন, ‘‘এটাই আমাদের সমস্যা, জানেন তো? ডাক্তারির সঙ্গে ঝাঁট দেওয়ার তো কোনও বিবাদ নেই। তা ছাড়া যেখানে বসে রোজ কাজ করি সেই জায়গাটা অপরিচ্ছন্ন থাকাটাও তো কোনও কাজের কথা নয়। তাই না?’’

ঝাঁট দিচ্ছেন চিকিৎসক সন্তোষকুমার বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র

রামনগর-বাছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আছেন সাকুল্যে তিন জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কিছুদিনের মধ্যেই অবসর নেবেন। অসুস্থতার কারণে মাঝেমধ্যেই তিনি আসতে পারেন না। ফার্মাসিস্টের বাবা গুরুতর অসুস্থ। তিনিও কিছুদিন ধরে ছুটিতে আছেন। অতএব, একা কুম্ভ হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র সামলাচ্ছেন সন্তোষবাবু।

তবে গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সন্তোষবাবু তাঁর সাধ্য মতো পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু এ ভাবে কত দিন চলবে? স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের অবিলম্বে এ ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত।

বেলডাঙা ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তরুণ বারুই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমন অবস্থার কথা জানেন। তিনি বলছেন, ‘‘সন্তোষবাবু ওখানকার মেডিক্যাল অফিসার। এমন দায়িত্বশীল লোক আমি আগে কখনও দেখিনি মশাই। জিডিএ অসুস্থ। ফার্মাসিস্ট ছুটিতে। কিন্তু সন্তোষবাবুর কোনও অনুযোগ নেই। তিনি নিয়মিত হাসপাতালে আসেন। অন্য কর্মীদেরও কাজও তিনিই করেন। তবে এই সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Beldanga Doctor Health Centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy