Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

চিকিৎসার সঙ্গে পথ্য ফ্রি হেরামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরের হেরামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পা রাখলে এমনই বিস্ময় অপেক্ষা করছে। সৌজন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের লাগোয়া বিঘে দুয়েক জমি। সেখানেই টোম্যাটো থেকে ক্যাপসিকম, পেঁপে থেকে কাঁচকলা এমনকি তুলসি-বাসক-হরতুকি মায় অ্যালোভেরা— বিভিন্ন গাছগাছালিরও চাষ চলছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের সেই পথ্য সরবরাহ করছে হাসপাতাল।

n হেরামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত মোদাস্সর। নিজস্ব চিত্র

n হেরামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত মোদাস্সর। নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ইসলামপুর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৮
Share: Save:

উপসর্গ শুনে খসখস করে পথ্য লিখলেন ডাক্তারবাবু— সকালে কাঁচকলার ঝোল আর রাতে দু’মুঠো ভাতের সঙ্গে নুন-হলুদ দিয়ে পেঁপে সেদ্ধ, ব্যাস!

ষাট ছুঁইছুই বৃদ্ধ আমতা আমতা করে দু’টো ‘বড়ি’র আব্দার করতেই আড়মোড়া ভেঙে ডাক্তার বললেন, ‘‘অত ওষুধ ওষুধ বাতিক কেন, যা বলছি তাই কর। পথ্যও ফ্রি পাবে।’’ ঈষৎ ঝুঁকে পড়ে চেয়ারের তলা থেকে টেনে আনলেন ট্রে। তাতে শিশির ভেজা আনাজ। একটা ছোট মাপের পেঁপে আর খান চারেক কাঁচকলার একটা কাঁদি দিয়ে বরজাহান শেখকে বিদায় করেই পরের রোগীকে ডেকে নিলেন ডাক্তার।

মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরের হেরামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পা রাখলে এমনই বিস্ময় অপেক্ষা করছে। সৌজন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের লাগোয়া বিঘে দুয়েক জমি। সেখানেই টোম্যাটো থেকে ক্যাপসিকম, পেঁপে থেকে কাঁচকলা এমনকি তুলসি-বাসক-হরতুকি মায় অ্যালোভেরা— বিভিন্ন গাছগাছালিরও চাষ চলছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের সেই পথ্য সরবরাহ করছে হাসপাতাল।

রুগ্ন মা, অপুষ্টিতে ভোগা শিশু থেকে পেট-রোগা বৃদ্ধ সকলের হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে এমনই হাসপাতালের মাঠ-ফলন। চিকিৎসা করাতে এসে ওষুধের সঙ্গে বিনি পয়সায় কলা-পেঁপে-পুঁইশাক নিয়ে হৃষ্ট মনেই গ্রামে ফিরছেন মানুষজন।

হাসপাতালের সকলেই এমন আনাজ-ভেষজের চাষে হাত পাকালেও পথটা দেখিয়েছিলেন মোদাসসর। হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মোদাসসর হোসেন বলেন, ‘‘এটা বছর দুয়েক হল শুরু করেছি আমরা। এখানে বদলি হয়ে আসার পরে দেখি হাসপাতাল চত্ত্বরে বিস্তীর্ণ জমি। ফাঁকা পরে আছে। ক্রমেই ভরে উঠছে আবর্জনার স্তূপে। জমিটা ব্যবহারের কথা ভেবে অনুমতি চাইতেই মিলল। আমনাজ লাগালাম। লকলক করে বেড়ে উঠল তারা। এখন তাই রোগীদের মধ্যে ভাগ করেই আনন্দ পাই আমরা।’’

হাসপাতালের নার্স পারভিন ববি সরকার বলছেন, ‘‘গ্রামীণ সাস্থ্যকেন্দ্র, আশপাশের গ্রামের দুঃস্থ মানুষেরই ভিড় বেশি। ওঁদের হাতে দু’টো কাঁচা টোম্যাটো তুলে দিলেই মুখটাই বদলে যায়, কী যে ভাল লাগে।’’

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাগানের সুবাসে বদলে গিয়েছে রোগীর ভিড়ের বহর। ধুঁকতে থাকা হাসপাতালে এখন পেট খারাপ, জ্বর-সর্দির পাশাপাশি ‘দুর্বল লাগছে’ বলেও রোগীর আনাগোনা বেড়েছে বলে মোদাসসর জানাচ্ছেন!

জেলার মূখ্য স্বাস্থ্যআধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘উদ্যোগটা সত্যিই ভাল। সব হাসপাতালেই জমি পড়ে আছে। অন্যরাও একটু ভেবে দেখলে তো পারেন!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Public Health Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy