Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

নোটে যন্ত্রণা, নেটে রঙ্গ

হাসতে হাসতে অনেকের চোখে জল বেরোয় বটে। কিন্তু চরম বিরক্তি কিংবা দুশ্চিন্তার মুহূর্তে হো হো করে হাসি? কিংবা ধরুন, পকেটে খুচরো বলতে সাকুল্যে দু’টো একশো টাকার নোট।

গৌরব বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১৪
Share: Save:

হাসতে হাসতে অনেকের চোখে জল বেরোয় বটে। কিন্তু চরম বিরক্তি কিংবা দুশ্চিন্তার মুহূর্তে হো হো করে হাসি?

কিংবা ধরুন, পকেটে খুচরো বলতে সাকুল্যে দু’টো একশো টাকার নোট। পরের দিন সকালে বাজার আসবে কী দিয়ে? রাতে খাওয়ার টেবিল থমথমে। ঠিক তখনই মোবাইলে কয়েন পড়ার আওয়াজ। হাসিতে ফেটে পড়লেন কর্তা। তারপর গিন্নিও।

ধুস, এমন আবার হয় নাকি?

সারা সন্ধ্যে শহর চষে একটি এটিএম কাউন্টারেও টাকা মেলেনি। রাতে ব্যাজার মুখে কম্পিউটরের সামনে বসলেন ঠিকই। কিন্তু মেজাজ মগডালে। একটু পরেই খুকখুক, খিকখিক। তারপর হাসির দমকে দেওয়ালের টিকটিকিটাও পর্যন্ত চমকে উঠল।

এমনটাও হয়?

হয় মানে, হইহই করে হচ্ছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ যেমন চলে তেমনই চলছিল। কিন্তু ৮ নভেম্বর, রাত আটটায় পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের ঘোষণার পর জোকস, টিপ্পনি, তরজার কোনও বিরাম নেই।

ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইন। মাঝ অঘ্রহায়ণের রোদ চাঁদি গরম করে দিচ্ছে। কৃষ্ণনগরের ব্যাঙ্কের সামনের সেই লাইনে দাঁড়ানো এক যুবকের পকেটে টুং টাং। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ—

‘ব্যাঙ্ক কিংবা এটিএম থেকে ফিরে আসার পরে নিজেকে শোলের শাম্বা মনে হয়। কারণ সকলেই জিজ্ঞাসা করে—‘কিতনে আদমি থে?’ যুবকটি হাসছেন। পাশে দাঁড়িয়ে যে প্রৌঢ় এতক্ষণ গজগজ করছিলেন, সেই তিনিও শুনে বলছেন, ‘‘বাহ্, এটা তো বেড়ে দিয়েছে। আমাকেও ওটা ফরোয়ার্ড করে দাও হে।’’

বহরমপুরের এ মুড়ো থেকে ও মুড়ো চষে ফেলেছেন এক কলেজ পড়ুয়া। কোনও এটিএমে টাকা নেই। ঠিক তখনই টুং...। বিরাট মেসেজ জুড়ে একটি ছেলে পকেটে হাত ঢুকিয়ে শুধু এ দিক ও দিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। নীচে লেখা— ‘কোথাও টাকা নেই তাই ঘুরে বেড়াচ্ছি।’ স্মাইলি সহ সে মেসেজ মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ল এক মুঠো থেকে আর এক মুঠো।

শুরুটা হয়েছিল—আমেরিকা ভোট গুনছে, ভারত নোট। তারপর থেকে বাতিল নোট, আম-পাবলিকের ভোগান্তি, মোদী ঠিক না ভুল—চর্চা চলছে সমানে। ঝাঁঝ, ব্যাঙ্গ, সমালোচনার পাশাপাশি ছুটছে অফুরন্ত হাহা-হিহি।

‘‘এমন অসময়ে এইটুকু আছে বলেই না পরের দিনের লড়াইয়ে নামতে পারছি। তাছাড়া কি প্রতিভা মশাই!’’ এটিএমের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন বহরমপুরের এক স্কুল শিক্ষক।

প্রতিভা বলে প্রতিভা! শিলাজিৎ-এর ঝিন্টি গানটা বদলে ফেসবুকে কে একজন গায়কের ছবি দিয়ে নীচে লিখে দিয়েছেন—‘ঝিন্টি তুই এটিএম হতে পারতিস, ঝরে পড়তো নোট টুপটাপ...।’ একজন জানতে চেয়েছেন, ‘এটিএমের জন্য কি ভিআইপি পাস লাগছে?’ বং পেন ‘চাঁদের পাহাড়’ কিঞ্চিৎ বদলে দিয়ে লিখেছে, ‘‘ব্ল্যাক মাম্বা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললে শঙ্কর। এবারে সে নিশ্চিন্তে ঘর থেকে বেরিয়ে এটিএমের দিকে যেতে পারবে।’’

আম-পাবলিকও যে এই অর্থ-হীন ঝামেলা কাটিয়ে কবে নিশ্চিন্তে এটিএম কিংবা ব্যাঙ্কে যেতে পারবে সেটাও কিন্তু লাখ টাকার (নতুন নোটে) প্রশ্ন!

পুনশ্চ—বাড়ি কিংবা অফিসে ঢুকতে দেরি হলেও নাকি আজকাল কেউ বিশেষ রাগ-অভিমান করছেন না। প্রশ্ন করলেই জবাব আসছে, ‘‘টাকা তুলতে গিয়েছিলাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation troll in social media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy