এমন ভোগান্তি নিত্যদিনের। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
চিত্র ১: সকাল দশটা থেকে সাড়ে দশটা। বেলডাঙার পাঁচরাহা এলাকার রাজ্য সড়কে ব্যস্ততা তখন তুঙ্গে। স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের পাশাপাশি অফিস যাত্রীরাও রীতিমতো ছুটছেন। কিন্তু সব ব্যস্ততা এসে থমকে গেল রেলেগেটের কাছে। রেলগেট বন্ধ। কেন? কারণ, সেই সময়েই বেলডাঙা স্টেশনে ঢোকার কথা আপ হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস ও ডাউন লালগোলা প্যাসেঞ্জারের। দু’টো ট্রেন দু’দিকে চলে যাওয়ার পরে তারপর খুলে দেওয়া হল সেই গেট। ততক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট।
চিত্র ২: দিনকয়েক আগে মেয়েকে বহরমপুরের একটি বেসরকারি স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন বেলডাঙার সুদেষ্ণা বিশ্বাস। রেলগেট বন্ধ থাকায় সময়মতো বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত একটি ভিড় বাসে কোনওরকমে ঝুলতে ঝুলতে যখন তিনি মেয়ের স্কুলের সামনে গিয়ে পৌঁছলেন ততক্ষণে স্কুল শুরু হয়ে গিয়েছে।
চিত্র ৩: সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন নওদার নজরুল শেখ। অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে বেলডাঙা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছিল। সকাল দশটা নাগাদ ওই পাঁচরাহা গেটে আটকে যায় অ্যাম্বুল্যান্সটি। নজরুলবাবুর ছেলে নজু রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘‘প্রায় আধঘণ্টা বাবাকে নিয়ে আটকে ছিলাম। কিছু একটা হয়ে গেলে তার দায় কে নিত?’’
পাঁচরাহা এলাকার ওই রেলগেটে আন্ডারপাস না থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিদিনই। প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনীতির কারবারিরা সকলেই এই সমস্যার কথা জানেন। জানেন, এলাকার মানুষের ক্ষোভের কথাও। কিন্তু সমস্যা সমাধানের প্রশ্নে সকলেই সকলের উপর দায় চাপাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
গত লোকসভা ভোটের আগে বেলডাঙায় এসে বহরমপুরের সাংসদ তথা রেলের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী ঘোষণা করেছিলেন এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। পাঁচরাহা রেলগেটে শীঘ্র একটি আন্ডারপাস তৈরি করা হবে। তারপর লোকসভা ভোট হয়ে গিয়েছে। পুরভোটও চলে গেল। বেলডাঙা থাকল বেলডাঙাতেই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অধীরবাবুর প্রতিশ্রুতিতে মানুষ আস্থা রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন, এতদিনের সমস্যার বোধহয় এ বার একটা সুরাহা হবে। কিন্তু এক বছর কেটে গিয়েছে। এখনও আন্ডারপাসের কোনও কাজই শুরু হয়নি।
অধীরবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘আন্ডারপাস ওখানে হবেই। লোকসভা ভোটের পরে সব কাজ সেরে টেন্ডার প্রক্রিয়া চালুর মুখে সরকারের পরিবর্তন হওয়ায় ওই কাজ থমকে রয়েছে। কিন্তু এখনও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ওই আন্ডারপাস আমরা বেলডাঙার মানুষকে উপহার দেবই।’’
প্রতিদিন পাঁচরাহার ওই রেলগেট দিয়ে ৩২টি ট্রেন যাতায়াত করে। ফলে দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার বন্ধ রাখতে হয় ওই গেটকে। প্রতি মঙ্গলবার বেলডাঙায় বসে পোশাক ও পশুহাট। ফলে গেট বন্ধ হয়ে গেলে সাইকেল, মোটরবাইক, বাস, লরি, রিকশার ভিড়ে জনবহূল ওই এলাকায় এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। সব সময় ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে।
সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রিয়রঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের আন্ডারপাসের প্রতিশ্রুতি ছিল রাজনৈতিক গিমিক।’’ তৃণমূলের শহর সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অধীরবাবু রেলের মঞ্চ ব্যবহার করে বেলডাঙা-সহ আশপাশের মানুষকে তখন ভাঁওতা দিয়েছেন।’’ বিজেপির শহর সভাপতি অলোক ঘোষ বলেন, ‘‘আন্ডারপাস তৈরির ঘোষণা পুরোটাই গল্প। বেলডাঙার মানুষ সেটা বুঝতে পেরেই এ বার পুরভোটে কংগ্রেসকে আর বিশ্বাস করেনি।’’ কংগ্রেসের শহর সভাপতি ভরত ঝাওর বলেন, ‘‘কে কী বলল তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। ওই আন্ডারপাস হবেই।’’
এ তো গেল রাজনৈতিক তরজা। প্রশাসন কী বলছে? বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘ওই রেলগেটের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। বিষয়টি আমরা রাজ্যকেও জানাচ্ছি।’’ কিন্তু আন্ডারপাস কবে হবে? সে প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy