Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
CAA Protest

মিলল না কাজ, ফের পরিযায়ী ওঁরা

দিল্লির হিংসায় প্রাণ বাঁচাতে  জাফরাবাদ এলাকার এক চিলতে ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন নওদার নেহারিতলা গ্রামের এগারো জন শ্রমিক।

ফের সেই দিল্লির পথেই। নিজস্ব চিত্র

ফের সেই দিল্লির পথেই। নিজস্ব চিত্র

মফিদুল ইসলাম
নেহারিতলা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০ ০২:৪৬
Share: Save:

আশ্বাস মুখেই থাকল, কাজ আর মিলল না!

দিল্লি ফেরত দু'সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও রুজির হদিশ করতে না পেরে শেষতক আতঙ্কের ঠিকানাতেই ফিরে চললেন নেহারিতলার শ্রমিকেরা।

দিল্লির হিংসায় প্রাণ বাঁচাতে জাফরাবাদ এলাকার এক চিলতে ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন নওদার নেহারিতলা গ্রামের এগারো জন শ্রমিক। প্রায় আড়াই দিন বুভুক্ষু থাকা মুর্শিদাবাদের আওলাদ শেখদের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পরে নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। উদ্ধার করে তাঁদের গ্রামে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছিল প্রশাসন। বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁদের তুলে দিয়েছিলেন গ্রামে ফেরার ট্রেনে। প্রায় রাজকীয় অভ্যর্থনায় গ্রামে ফিরেছিলেন তাঁরা। জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের কর্তারা গালভরা আশ্বাস দিয়েছিলেন সরকারি প্রকল্পে তাঁদের কাজ পাওয়া নিছক সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু পক্ষকাল ঘুরে গেলেও সে প্রতিশ্রুতি মেলেনি। দেকা মেলেনি সরকারি আমলা থেকে জনপ্রতিনিধিদের। দিন আনি দিন খাই সেই শ্রমিকেরা তাই জাফরাবাদেই রোজগারের আশায় পাড়ি দিলেন বৃহস্পতিবার। গ্রাম ছাড়ার আগে, এ দিন আওলাদ শেখ আর মিন্টু শেখ বলে গেলেন, ‘‘পেট তো চালাতে হব, পরিবারটা তো ভেসে যেতে পারে না! এখানে কাজ মিলবে না। তাই বসে থেকে লাভ নেই, চললাম।’’

নওদার ত্রিমোহিনী নেহারিতলা গ্রামের জনা ত্রিশেক যুবক বিভিন্ন কাজে ছড়িয়ে রয়েছেন দিল্লির জাফরাবাদ সংলগ্ন মৌজপুর, গন্ডাচক, নুরিনা এলাকায়। প্রায় আড়াইদিন অভুক্ত শ্রমিকদের উদ্ধারের পরে দিল্লি পুলিশের একটি দল তাদের উদ্ধার করে ২৮ ফেব্রুয়ারি নেহারিতলা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। গ্রামীণ পরিবারগুলিও ভেবেছিল, ঢের হয়েছে, ঘরের ছেলেদের আর বাইরে কাজে যেতে দেবেন না।

কিন্তু স্বপ্নের সঙ্গে বাসতবের সংঘাত মেটেনি। কাজ আর মিলল না গ্রামে। আওলাদ বলেন, ‘‘ভেবে ছিলাম, এ বার নিশ্চয় এলাকায় কাজ পাব। ভুল বেবেছিলাম, মিলল না কিছুই। তাই বাধ্য হয়েই পুরনো কাজের জায়গায় ফিরে যাচ্ছি।’’ আওলাদের ভাই হালিম শেখও দিল্লির গন্ডাচক এলাকায় একই কারখানায় কাজ করতেন। তিনিও আর দিন কয়েকের মধ্যেই ফিরে যাবেন বলে জানা গিয়েছে। দিল্লি ফিরে গেলেন মিন্টু শেখ-ও। বলছেন, ‘‘কী আর করব, কাজ তো করতেই হবে!’’

আওলাদের মা আরফাতন বিবি বলছেন, ‘‘আমার দুই ছেলেই দিল্লিতে থাকে। ওদের পাঠানো টাকাতেই সংসার চলে। ওরা কাজ না করলে আমরা খাব কি, তাই আর বাধা দিলাম না।’’ প্রায় পাঁচ বছর ধরে দিল্লির গন্ডাচক এলাকায় একটি ইলেকট্রিক ফ্যানের কন্ডেনসার তৈরির কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন নেহারিতলার জনা ত্রিশ যুবক। দিল্লির হিংসার ঘটনায় ফিরে এসেছিলেন গ্রামে।

নওদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষের আক্ষেপ, ‘‘নারেগা প্রকল্পে একশো দিনের কাজ ছাড়া আমাদের অন্য কোনও প্রকল্পে কাজ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কী করব বলুন!’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন দু’দিন আগেও আশ্বাসে ভরে দিয়েছিলেন নেহারিতলা গ্রাম। এ দিন তাঁর দায়সারা জবাব, ‘‘এলাকায় ওঁরা কি কাজ পেতে পারেন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দেখি!’’

অন্য বিষয়গুলি:

CAA Protest Delhi Violence Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy