Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Madhyamik

Madhyamik 2022: রাজ্যের উল্টো চিত্র নদিয়ায়, কমেছে পরীক্ষার্থী

সব মিলিয়ে সংসার টানতে কিশোর-কিশোরীদের অনেকেরই পড়়া ছেড়ে বাইরে কাজে চলে যাওয়া ছাড়া বিকল্প পথ খোলা থাকছে না।

আজ শুরু মাধ্যমিক পরীক্ষা। স্কুলে-স্কুলে তারই প্রস্তুতি। কৃষ্ণনগরের একটি স্কুলে।

আজ শুরু মাধ্যমিক পরীক্ষা। স্কুলে-স্কুলে তারই প্রস্তুতি। কৃষ্ণনগরের একটি স্কুলে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২২ ০৮:৪৯
Share: Save:

রাজ্যের উল্টো পথে হাঁটছে নদিয়া।

গোটা রাজ্যে যখন গত বছরের তুলনায় এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার বেড়েছে সেখানে নদিয়ায় সংখ্যাটা কমেছে। গত বছর রাজ্যে ১০ লক্ষ ৭৯ হাজার ৬৯৯ জন পড়ুয়া মাধ্যমিকে নাম নথিভুক্ত করেছিল। সেখানে এ বছর নাম নথিভুক্ত করেছে ১১ লক্ষ ২৬ হাজার ৮৬৩। তাতে খুশি শিক্ষাবিদ ও পর্ষদ কর্তারা জানিয়েছেন, করোনা আবহে স্কুলছুটের যে আশঙ্কা ছিল আদতে তা হয়নি।

কিন্তু একক ভাবে নদিয়া জেলার পরিসংখ্যান অন্য কথা বলছে। এই জেলায় গত বারের তুলনায় পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। এবং শিক্ষাবিদ ও সমাজবিদদের একটা বড় অংশের ধারণা, এর মূল কারণ করোনাকালে অনেক ছাত্রছাত্রীর স্কুলছুট হওয়া।

করোনার জেরে হওয়া লকডাউনে বহু পরিবারের রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় স্কুলও বন্ধ ছিল। পরিস্থিতির চাপে সংসার চালাতে অনেক ছাত্রকে এর পর ভিন রাজ্যে কাজে চলে যেতে হয়েছে। ফলে তাদের অনেকের অ্যাডমিট কার্ড চলে আসা সত্ত্বেও তারা পরীক্ষায় বসতে পারছে না। আর ছাত্রীদের অনেককে পরিবার থেকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। লকডাউনের পর প্রথম স্কুল খোলার পরেই এইরকম অনেক ছাত্রছাত্রীর কথা জানতে পেরেছিলেন একাধিক স্কুলের শিক্ষকেরা।

নদিয়া জেলায় এ বছর সাড়ে ছেষট্টি হাজার পড়ুয়া মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর সংখ্যাটা ছিল প্রায় বাহাত্তর হাজার। অর্থাৎ এ বার জেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পরীক্ষার্থী কমেছে।

অনেকেই মনে করছেন এর পিছনে আরও বিভিন্ন কারণ আছে। গত বছর অন লাইনে পরীক্ষা হয়েছিল। এ বার অফ লাইনে অর্থাৎ পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। সে ভাবে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পড়াশোনার যে প্রস্তুতি দরকার তা হয়নি বলে অনেকে ফর্ম ফিলাপ করেনি। আবার অনেক পড়ুয়া রেজিস্ট্রেশনের পরে ফর্ম পূরণ করে জমা দেয়নি। তা ছাড়া, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি। তবে অবশ্যই মূল কারণ মনে করা হচ্ছে লকডাউনের ফলে স্কুলছুট হওয়াকে।

মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের নদিয়া জেলা আহ্বায়ক রমেন ঘোষ বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, জেলায় এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমার একটা বড় কারণ সম্ভবত কাজের সন্ধানে পড়ুয়াদের অনেকের ভিন রাজ্যে বা বিদেশে চলে যাওয়া। অনেকে ছাত্রীর আবার বিয়েও হয়ে গিয়েছে।”

জেলার এক স্কুলের প্রধানশিক্ষকের কথায়, “স্কুল খোলার পর যে সব পড়ুয়া স্কুলে আসছিল না তাদের চিহ্নিত করে আমরা বাড়ি-বাড়ি গিয়েছিলাম। তখনই দেখেছিলাম, অনেক পড়ুয়া হয় স্থানীয় ভাবে কাজে যোগ দিয়েছে বা কাজের সন্ধানে বাইরে চলে গিয়েছে। আমরা বাড়ির লোককে অনেক বুঝিয়েও তাদের ফিরিয়ে আনতে পারিনি।”

জেলার এক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকার কথায়, “আমাদের স্কুলেরই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা এমন অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আবার কেউ কেউ পরিচারিকার কাজ নিয়ে অন্য রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।”

তা হলে কি অন্য জেলার তুলনায় নদিয়ায় স্কুলছুট বেশি? শিক্ষাকর্তারা জানাচ্ছেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে সরকারি সমীক্ষা প্রয়োজন।। তাদের অনেকেই মনে করছেন, নদিয়া একটা বিরাট অংশ অনুন্নত এবং সীমান্ত এলাকা। সেখানে মানুষ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে। সেখানে না আছে শিল্প, না আছে ঠিকমতো চাষের সুযোগ। তাঁত শিল্পে জেলার নাম ছিল। লকডাউনে সেই শিল্পও মারাত্মক
ধাক্কা খেয়েছে।

সব মিলিয়ে সংসার টানতে কিশোর-কিশোরীদের অনেকেরই পড়়া ছেড়ে বাইরে কাজে চলে যাওয়া ছাড়া বিকল্প পথ খোলা থাকছে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy