প্রতীকী ছবি।
কখনও সিগন্যালের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি থেকে কখনও বা গতি মন্থর হলে— পরিযায়ী স্পেশ্যাল থেকে নেমে পড়ছেন তাঁরা। তার পর কোয়রান্টিনের ‘হ্যাপা’ এড়াতে টোটো-অটো ধরে আপন গ্রামে সেঁদিয়ে যাচ্ছেন নিস্তব্ধে। অভিযোগটা কানে এসেছে প্রশাসনের, কিন্তু তা সুনির্দিষ্ট ভাবে যাচাই করার উপায় নেই। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা মাথা নাড়ছেন, ‘‘উপায় কী বলুন, রেলের তরফে যাত্রীদের নাম-ঠিকানা তো পাঠানো হচ্ছে না। ফলে যাচাই করার উপায় নেই। প্রাথমিক পরীক্ষার আগেই তাঁরা যদি গ্রামে চলে যান, সংক্রমণ রুখবে কে!’’
অভিযোগটা যে ফেলনা নয়, সহযাত্রীদের কথাতেই তা স্পষ্ট। বহরমপুরের কাছে গোবিন্দপুর গ্রামের হবিবুর রহমান তেমনই এক প্রতক্ষ্যদর্শী। তিনি বলছেন, ‘‘মহারাষ্ট্র থেকে ফিরছিলাম। ট্রেন সারগাছির কাছে এসে সিগন্যাল না পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল, অবাক হয়ে দেখলাম, ট্রেন থেকে ঝুপঝাপ করে নেমে পড়লেন অনেকেই। যাঁদের বাড়ি সারগাছির আশপাশে। ট্রেনের গার্ড তা দেখেও দেখলেন না। ফলে কোনও পরীক্ষা ছাড়াই তাঁরা সেঁদিয়ে গেলেন যে যার গ্রামে।’’ ডোমকলের এক্রাম আলির অভিজ্ঞতা, “আমিও ভিন রাজ্য থেকে ফিরেছি। একই অভিজ্ঞতা। মনে রাখবেন, এর ফলে আঙুলটা তো আমাদের মতো পরিযায়ী শ্রমিকদের দিকেই উঠছে।’’ শুধু ট্রেন নয়, বাসেও ভিন রাজ্য থেকে গ্রামে ফিরেছেন অনেকে। ছবিটা সেখানেও একইরকম। বহরমপুরে বাস ঢোকার আগে লেভেল ক্রশিং কিংবা দীর্ঘ বাস যাত্রায় চালক ক্ষণিকের বিশ্রামের জন্য বাস থামালে, নিঃশব্দে তা থেকে নেমে গ্রামের পথ ধরছেন অনেকে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “স্বাস্থ্য পরীক্ষা না হওয়ায় ওই সব শ্রমিকদের নিয়ে একটা চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। গোষ্ঠি সংক্রমণ জেলায় এখনও ছড়ায়নি। কিন্তু এ অবস্থা চলতে থাকলে ছড়াতে কতক্ষণ!’’
মুখ্য স্বাস্থ্যআধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, “যাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে জেলায় ফিরছেন, তাঁদের উচিত নিজের উদ্যোগেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া। না হলে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।” সমস্যাটা রয়েছে স্টেশনেও। কারণ এক-একটি ট্রেনে কত জন পরিযায়ী শ্রমিক জেলায় ফিরছেন তার কোনও স্পষ্ট হিসেব নেই। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘প্রথম দিকে যে ট্রেনগুলি এসেছে তাতে কত জন যাত্রী আসছেন তার একটা হিসেব ছিল। তবে পরে যখন একের পর এক ট্রেন ঢুকতে শুরু করল, তার পূর্ণাঙ্গ যাত্রী তালিকা আমাদের কাছে আর এল না। ফলে প্রশাসন জানতেও পারছে না কে ফিরল আর কে ফিরল না কিংবা মাঝপথে নেমে গেল কিনা।’’
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সিরাজ দানেশ্বর বলেন, “তবু আমরা সর্বত্র নজর রেখেছি। সড়ক পথের বিভিন্ন জায়গায় নাকা চেকিং করা হচ্ছে। তবু কিছু লোক আড়াল করে গ্রামে ঢুকে যাচ্ছেন। ফলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy