দর্ঘটনায়-মৃত। কান্দির বড়ঞার বাসিন্দা মুর্শিদা খাতুন, রাসেদ শেখ। নিজস্ব চিত্র।
অনেক দিন পরে ঘরের ছেলে ফেরার আনন্দে মেতে ওঠার কথা ছিল বাড়িটার। কিন্তু শুক্রবার সকালে মুর্শিদাবাদের বড়ঞার সৈয়দপাড়ার সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল শোকে থমথম করছে। সকালে পুলিশ টেলিফোনে জানায়, পথ দুর্ঘটনায় পরিবারের পাঁচ জন মারা গিয়েছেন। তারপর থেকেই বদলে গিয়েছে পরিবারের ছবি।
তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও তাঁদের সন্তানদের নিয়ে গৃহকর্তা রাসেদ শেখের ভরা সংসার।
বছর বারো আগে নির্মাণ শিল্পে জোগাড়ের কাজে মুম্বই যান তাঁর তিন ছেলে— আবসার, কওসর ও সামাদ। পরে রাজমিস্ত্রির কাজ শিখে ছেলেরা এখন বাড়ি তৈরির ঠিকাদারিও শুরু করেছেন। সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আসছিল। মেজো ছেলে কওসর প্রায় এক বছর পরে বাড়ি আসছিলেন বলে খুশির আমেজ তৈরি হয়।
পরিবার সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর প্লেনে দমদমে নামার কথা। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার জন্য এলাকা থেকে তিনি গাড়ি ভাড়া করেছিলেন। বাড়ির লোকেদের ওই গাড়িতেই কলকাতায় আসার জন্য জোরাজুরি করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হই হই করতে করতে পরিবারের ১০ জন রওনা দেন। কিন্তু এমন পরিণতি হবে কে জানত!
এ দিন ভোরে পূর্ব বর্ধমানের দেওয়ানদিঘি থানা এলাকায় কওসারদের নিয়ে ফেরা গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে। মারা যান কওসরের বাবা, ছেলে, বোন, ভাগ্নি, ভাইপোরা। আহত হয়েছেন কওসর, তাঁর স্ত্রী, ছেলে, গাড়ির চালক-সহ সাত জন।
বাড়ি প্রায় ফাঁকা করে সবাই কওসরকে আনতে যাওয়ায় বাপেরবাড়িতে এসেছিলেন তাঁর দিদি দুলালি বিবি। তিনি বলেন, ‘‘সকালে বাড়ির মোবাইলে পুলিশের ফোন পেয়েই কেঁপে উঠি। দুর্ঘটনায় আমাদের বাড়ির পাঁচ জন মারা গিয়েছে শোনার পরে আর কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারিনি।’’
দোতলা মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে কেঁদে যাচ্ছিলেন কওসরের মা বেলি বিবি। তিনি বলেন, ‘‘রাতেই ছেলের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়। বাড়ির সবাই ওকে গাড়ি নিয়ে আনতে গিয়েছে দেখে ছেলে খুব খুশি হয়েছিল। আমি যাইনি বলে একটু রাগ দেখায়। ছেলে বাড়ি ফেরার পরে একটা পারিবারিক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।”
পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করেন বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। তিনি বলেন, “ছেলের বাড়ি ফেরার আনন্দে পরিবারটি মেতে ছিল। কিন্তু ওই ঘটনায় শুধু কওসরের পরিবার নয়, সারা গ্রামে শোক নেমেছে।’’
আহতদের অনেকেই কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। মাথায় আঘাত নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি কওসরের স্ত্রী রুমজেলা কিছুটা কথা বলার অবস্থায় ছিলেন। বেলা পর্যন্ত তাঁকে নিকটজনদের হারানোর খবর দেওয়া হয়নি। অস্ফুট স্বরে তিনি বলেন, ‘‘রাত দেড়টা নাগাদ দমদম থেকে আমরা বেরোই। শক্তিগড় থেকে বাড়ির জন্য মিষ্টি কেনা হয়। তারপর গাড়িতে আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দুর্ঘটনার পরে কে-কোথায়, কেমন আছে, জানি না।’’ বর্ধমান মেডিক্যালে আসেন কওসরের পরিজনেরা। জরুরি বিভাগের সামনে তাঁরা কান্নাকাটি করছিলেন। কওসরের জেঠু শান্তি শেখ, এক আত্মীয় ইনতাজ শেখ বলেন, ‘‘বাড়ির বড়রা ছাড়াও তিনটে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে মারা গেল। ওদের দেহ নিয়ে কী ভাবে বাড়ি ফিরব?’’
দুর্ঘটনাস্থল দেওয়ানদিঘি থানার কামনাড়ার ক্ষেতিয়া পঞ্চায়েত ভবন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে যাত্রীদের জিনিসপত্র ছড়িয়ে। ঘাসে রক্তের দাগ। বাসিন্দাদের দাবি, সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই ছিল যে কওসরদের গাড়ি পাশের বিদ্যুতের খুঁটিতে গিয়ে ধাক্কা মারে। খবর পেয়ে দেওয়ানদিঘি থানার ওসি উত্তাল সামন্তের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গিয়ে উদ্ধারে নামে। শাবল দিয়ে গাড়ির দরজা ভেঙে প্রথমে তিন শিশু-সহ ন’জনকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। পরে ক্রেন এনে গাড়িটিকে সোজা করে আরও তিন জনকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বড়ঞার মানিকপুরের বাসিন্দা, ওই গাড়ির চালক ইব্রাহিম শেখ তাদের জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে ট্রাকটি দ্রুত গতিতে আসছিল।ঘটনাস্থলের পাশেই বাড়ি বিপ্লব দাসের। তাঁর দাবি, “বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। কান্নার শব্দ পেয়ে বেরিয়ে দেখি গাড়িটা উল্টে পড়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy