প্রতীকী ছবি
কোথাও তৃণমূলের উপপ্রধানের স্বামী বা শাশুড়ি, কোথাও বিজেপির প্রধানের ছেলের নামে আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা এসেছে। কোথাও তালিকায় নাম রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষের মায়ের, তো কোথাও পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপির বিরোধী দলনেতার স্ত্রীর নামে আমপানের ঘর ভাঙার টাকা এসেছে। নদিয়া জেলার সর্বত্রই কমবেশি একই অবস্থা।
নেতারা প্রকাশ্যে যাই বলুন, এই দুর্নীতির সঙ্গে কমবেশি জড়িয়ে আছেন ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধিরা। সংখ্যাটা যে নেহাত কম নয় সেটা পরিষ্কার হয়ে যায় শুধু চাপড়া ব্লকের দিকে তাকালেই। এই ব্লকে সম্পূর্ণ ঘর ভাঙার ৫০৫টি আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার আগে ব্লক প্রশাসন তদন্তে নামে। আর তাতেই সাড়ে চারশো জনের নাম বাদ যায়, যারা প্রায় সকলেই শাসক দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের মায়ের নাম তার অন্যতম। ঝাড়াই-বাছাই শেষে পড়ে থাকে মাত্র ৫৫ জনের নাম।
হাঁসখালি ব্লকের ময়ূরহাট-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধানের স্বামী ও শাশুড়ির নামে টাকা এসেছে। টাকা এসেছে গাজনা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধানের ঘনিষ্ঠ একই পরিবারের পাঁচ জনের নামে, যাঁদের সকলেরই পাকা বাড়ি আছে। নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান সিরাজুল শেখের স্ত্রী এবং মেয়ের নাম যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে উপপ্রধান সুতপা রায়চৌধুরীর দেওরের নামও। পঞ্চায়েতের সঞ্চালক উজ্জ্বলা দেবনাথের নামও তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। শান্তিপুরের বেলগড়িয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধানের স্ত্রীর নামও আছে তালিকায়।
তৃণমূলের তুলনায় বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে অনেক কম জায়গায়। তবু যতটুকু যা সুযোগ আছে তার সদ্ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে অনেকর বিরুদ্ধেই। ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের ছেলের নামে টাকা এসেছে। টাকা এসেছে নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতার স্ত্রীর নামেও। বিজেপির দখলে থাকা বেথুয়াডহরি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক সদস্যের নিকটাত্মীয়ের নামও।
এঁদের কেউ প্রশাসনের চাপে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন, আবার কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করা হয়েছে যাতে টাকা তুলে নিতে না পারেন। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ছেলের নামে আসা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা। আবার ময়ূরহাট ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের স্বামী ও শাশুড়ির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু হাঁসখালি ব্লকেই ১৭ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করা হয়েছে। জেলায় সংখ্যাটা প্রায় ৫৭। আবার কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের ভাতজাংলা গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’জন, ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’জন আর রুইপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সদস্যের আত্মীয়-ঘনিষ্ঠেরা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “অনেকেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। আমরা নানা ভাবে চাপ দিয়ে সেই টাকা ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
গত ২০ মে রাতে আমপান ঝড়ের পরের দিনই সমস্ত প্রাম পঞ্চায়েত থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। তার পরের দিন জেলা থেকে রাজ্যের কাছে সেই তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই তালিকার ভিত্তিতে টাকা চলে এসেছে ব্লকে। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ব্লকই তালিকা পাঠানোর সময়ে তাড়াহুড়োয় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা খতিয়ে দেখার সুযোগ পায়নি। কিন্তু টাকা দেওয়ার সময়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। আর তাতেই ধরা পড়ছে স্বজনপোষণ। অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রায় চোদ্দশো আবেদন নতুন করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নদিয়া থেকে চোদ্দো হাজারেরও বেশি সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রায় ৫৪ হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্তের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোনও টাকা এখনও আসেনি। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রথম কিস্তিতে ১০ হাজার জনের নামে টাকা এসেছে। তার মধ্যে প্রায় সাড়ে ন’হাজার জনের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও সরাসরি নবান্নে সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে টাকা চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে ৩ হাজার ৭১৬ জনের। আবার পুলিশের কাছে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার, যার মধ্যে রানাঘাট পুলিশ জেলাতেই চার হাজারের বেশি। নবান্নে জমা পড়া আবেদনের মধ্যে ২ হাজার ৪৭২ জন টাকা আগেই পেয়ে গিয়েছেন। পুলিশের কাছে আবেদনের মধ্যে ৩ হাজার ৪৪৩ জন ক্ষতিপুরণের টাকা পেয়েছেন। বাকিদের মধ্যে অনেকে আছেন যাঁরা নবান্ন ও পুলিশ — দুই জায়গাতেই আবেদন করেছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “সরকারি ভাবে যা যা নির্দেশিকা আসছে সেই মতোই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy