Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

ত্রাণে মাথা গোঁজার ত্রিপল পেলেন না গৃহহারা মানুষ

নদিয়ায় আমপানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কল্যাণী-নদিয়া-চাকদহ এলাকায়।

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

মনিরুল শেখ 
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০১:০৪
Share: Save:

রামবদন মাহাতোর এক কামরার ঘরের টিন উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। কল্যাণীর চর জাজিরা গ্রামে শনিবার দুপুরে বাড়ির উঠোনে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন রামবদন। ফ্যাকাশে মুখে বললেন, ‘‘ এ দেশে প্রশাসন বলে আদৌ কি কিছু আছে? মাথা ঢাকার একটা ত্রিপলও তারা দিতে পারে না! এখন উপায়ান্ত না-পেয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে পড়শির বাড়িতে।’’

ত্রাণে যাতে কোনও সমস্যা না- হয় সে ব্যাপারে শনিবারই আমলাদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নদিয়ায় আমপানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কল্যাণী-নদিয়া-চাকদহ এলাকায়। কিন্তু ঝড়বিধ্বস্ত সেই অঞ্চলের বহু গ্রামে ঘরহারা মানুষের এখনও মাথা ঢাকার ত্রিপলটুকু মেলেনি বলে অভিযোগ।

কল্যাণী শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ঝুমা চক্রবর্তী যেমন জানাচ্ছেন, ঝড়ের রাতে তাঁর বাড়ির দু’টি ঘরের টিন উড়ে গিয়ে পাশের একটি পরিত্যক্ত জায়গায় পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। গত তিন দিনে বহু জায়গায় দরবার করেও ঝুমা একটি ত্রিপলও জোগাড় করতে পারেননি। শেষে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে ঘরের ছাদে টিন দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। ক্ষোভে ফেটে পড়ে তিনি বলেন, ‘‘ সরকার তো শুনছি বহু কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু বাস্তবে তা কিছুই পেলাম না। একেই লকডাউনে পরিবারের সব আয় বন্ধ। তার উপরে ঝড়ে এই দশা!’’ কাঁচরাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর চাঁদামারির বাসিন্দা যদু মণ্ডলের অবস্থা তো আরও খারাপ। তাঁর ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে। ত্রিপল না পেয়ে তিনিও টিন কিনে ঘর বানাতে শুরু করেছেন। তাঁরও আক্ষেপ, ‘‘কেউ একটা ত্রিপলও দিল না। এমনিতেই লকডাউনে দু’মাস ধরে কাজহারা। তার উপর এখন টাকা ধার নিয়ে টিন লাগাচ্ছি। কবে সরকার ত্রিপল দেবে সেই অপেক্ষায় কত দিন ছাদহীন ঘরে থাকব?’’

জেলার একাধিক ব্লকের বিডিও-রা জানাচ্ছেন, জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতরের তরফে ত্রিপল কেনা হয়। তারপরে তা মহকুমাশাসকের অফিস ও ব্লক অফিস ঘুরে আসে পঞ্চায়েত অফিসে। তারা তা মানুষকে বিলি করে। জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রিপলই নেই। বিপর্যয়ের পূ্র্বাভাস পেয়েই ত্রিপল কিনে রাখলে এমন হত না।

কল্যাণীর কাঁচরাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের পঙ্কজকুমার সিংহ বলছেন, ‘‘আমার এলাকায় হাজারের বেশি লোকের ঘর ভেঙেছে। কিন্তু ব্লক একটিও ত্রিপল দেয়নি। ফলে পঞ্চায়েত নিজস্ব তহবিল থেকে শ’দুয়েক ত্রিপল কিনে দুর্গতদের মধ্যে বিলি করেছে। এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।’’

মদনপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের বিদিশা ঘোষ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘বিধায়ক কিছু ত্রিপল দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে তা বিলি করে দিয়েছি।’’ হরিণঘাটার কাষ্ঠডাঙা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের গনেশ মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমার এলাকায় অন্তত ৭০০ বাড়ি পুরোপুরি বা আংশিক ভেঙেছে। ব্লক অফিস থেকে এখনও পর্যন্ত সাকূল্যে ১০০টি ত্রিপল পেয়েছি। ফলে বহু লোককেই দেওয়া যায়নি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy