Advertisement
E-Paper

জনস্রোতে ভাসল বিধি

রাত বাড়তেই জনস্রোতে ভাসল রাস্তা। এভি স্কুল মোড় থেকে জলঙ্গির ঘাট পর্যন্ত হেঁটেছেন বহু মানুষ। ব্যাপক ভিড় হয়েছে পোস্ট অফিস মোড়ে। পুলিশ ছিল কার্যত অসহায় দর্শক। 

কোথায় করোনা বিধি? সাং না বেরোলেও বিসর্জন দেখার আশায় পথে বেরিয়ে পড়ল বেপরোয়া জনতা। মঙ্গলবার রাতে কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

কোথায় করোনা বিধি? সাং না বেরোলেও বিসর্জন দেখার আশায় পথে বেরিয়ে পড়ল বেপরোয়া জনতা। মঙ্গলবার রাতে কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০ ০১:৫৯
Share
Save

হাইকোর্টের নির্দেশ শিরোধার্য করে সাঙে বিসর্জন থেকে বিরত থাকল বারোয়ারিগুলি। কিন্তু করোনার সুরক্ষা বিধি উপেক্ষা করে ভাসানের রাতে রাস্তায় নামল কৃষ্ণনগর। ফলে সাং বন্ধ করে সংক্রমণের যে আশঙ্কা এড়াতে চাওয়া হয়েছিল, তার অনেকটাই ব্যর্থ হয়ে গেল।

প্রথা মেনে প্রতিমা যাবে না রাজবাড়ি, এটা যেন মানতেই পারছিলেন না কৃষ্ণনাগরিকদের একাংশ। তার উপরে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সাং নেই। দুইয়ে মিলিয়ে বিকেল-সন্ধে পর্যন্ত তেমন লোক ছিল না রাস্তায়। কিন্তু সোমবার পুজোর দিন যা হয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল মঙ্গলবারেও। রাত বাড়তেই জনস্রোতে ভাসল রাস্তা। এভি স্কুল মোড় থেকে জলঙ্গির ঘাট পর্যন্ত হেঁটেছেন বহু মানুষ। ব্যাপক ভিড় হয়েছে পোস্ট অফিস মোড়ে। পুলিশ ছিল কার্যত অসহায় দর্শক।

বিকেল পর্যন্ত বিসর্জন হয়েছে কোনও ভিড় ছাড়াই। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র।

অতিমারির কারণে দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে সমস্ত উৎসবেই বিসর্জনের শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে হাইকোর্ট। কিন্তু সাঙে বিসর্জনের সঙ্গে কৃষ্ণনগরের বহু মানুষের আবেগ এমনই জড়িত যে তার চাপে বারোয়ারিগুলি সাং বার করার জন্য জেদাজেদি করতে থাকে। রবিবার জেলার পুলিশ সুপার স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, সাং বার করে আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে। এর পরেই একে-একে বড় বারোয়ারিগুলি জানিয়ে দিতে থাকে, তারা সাং বার করবে না। কিছু বারোয়ারি সোমবার রাত পর্যন্তও গোঁ ধরে ছিল। পুলিশ বুঝিয়ে তাদের নিরস্ত করে। তবে এর পরেও কোনও বারোয়ারি সাং বার করতে চাইলে যাতে তাদের মণ্ডপেই আটকে দেওয়া যায়, তার জন্য পুলিশ প্রস্তুত হয়েই ছিল। কিন্তু রাত পর্যন্ত তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। সমস্ত বারোয়ারিই একে-একে চাকাগাড়ি, ট্রাক্টর বা লরিতে করে প্রতিমা নিরঞ্জনের ঘাটে নিয়ে যায়।

এ দিন দুপুর ২টো থেকে বিসর্জন শুরু করার কথা জানিয়েছিল প্রশাসন। তার আগেই ট্রাক্টরে করে প্রতিমা বের করে দেয় ‘অভিযাত্রী’। তার পর বেশ কিছু সময় ফাঁকাই ছিল। সন্ধে নামার আগে হাতারপাড়া, নুড়িপাড়ার মত বড় বারোয়ারিগুলি সাং ছাড়াই প্রতিমা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তখন রাস্তা ছিল প্রায় ফাঁকা। প্রতিমার সঙ্গে পুজো কমটির তত সদস্যও ছিল না। সঙ্গে ছিল হাতে গোনা কয়েকটা ঢাক। অনেকেই এ দিন ঘরে বসে অনলাইনে বিসর্জন দেখেছেন। এঁদেরই এক জন অরুপ মণ্ডল বলেন, “করোনার ভয় তো আছেই। তার উপরে শুনছি এ বার নাকি গন্ডগোল হতে পারে। দু’দিক দিয়েই বিপদ। তাই আর বেরনোর ঝুঁকি নিলাম না।” বিয়ে হওয়ার পর থেকে বিসর্জনের রাতে রাস্তার ধারে বসে শোভাযাত্রা দেখে আসছেন অপর্ণা চক্রবর্তী। তা-ও প্রায় ২১ বছর হয়ে গেল। এ বার তিনি বেরোন নি। তাঁর কথায়, “সাংই যখন থাকছে না, বেরিয়ে কী হবে? ওটাই তো প্রধান আকর্ষণ। সাং থাকলে না হয় করোনার ঝুঁকি নিয়েও বেরোতাম। এ বার কী জন্য যাব?”

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধে সাড়ে ৬টার মধ্যে ৩০টির বেশি প্রতিমা বিসর্জনে চলে গিয়েছিল। তার মধ্যে যেমন তিন-চারটি বড় বারোয়ারি ছিল, তেমনই ছিল ছোট বারোয়ারি যারা সাধারণত দ্বিতীয় দিন প্রতিমা বিসর্জন দিত। আর ছিল বেশ কিছু বাড়ির পুজোর প্রতিমা। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। একটু একটু করে রাস্তায় ভিড় বাড়তে থাকে। কিছুটা উদ্দেশ্যহীনের মতোই বিসর্জন ‘রুটে’ ঘুরে বেড়াতে থাকে আমজনতা। এরই মধ্যে এক-একটি প্রতিমা এসে পড়লে ভিড় ছেঁকে ধরে। ভিড় ঠেলে প্রতিমা বার করে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

রাতে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন,“ হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে চলেছে বারোয়াগুলি। তবে শেষ পর্যন্ত যাতে সবটা ঠিকঠাক চলে তার জন্য আমরা সব রকম ভাবে প্রস্তুত আছি।”

Jagadhatri Puja Immersion Coronavirus in West Bengal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}