নিজস্ব চিত্র।
ক্লান্ত শহরের শ্রাবণ খোঁজা বোধহয় এ বারের মতো ফুরালো। গগন ঘনাইয়া অবশেষে গহন ঘন ছাইল। আর সে আসতেই লোকাল ট্রেনের গুমোট কামরায় স্বস্তির নিঃশ্বাস। ভিজে মাটির সোঁদাগন্ধে শুখা আবাদ ম-ম। চাষির কাটাকুটি মুখে চওড়া হাসি। চৌত্রিশ নম্বর ধরে ছুটে চলা গাড়ির উইন্ড স্ক্রিন বৃষ্টিতে ঝাপসা হতেই খানাখন্দের সব বিরক্তি ভুলে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি মাখে আরোহী। গুঁড়ো চুলে, মুখে কপালে। আর রুখা মাটির কবি তাঁর প্রথম কবিতার বইয়ের নাম রাখেন ‘আওল বরষা ধ্বনি’!
আষাঢ় থেকে যার প্রতীক্ষায় ছিল তাবৎ প্রাণীকুল। শ্রাবণ হয়ে সে এল ফিরে। কিন্তু পরীক্ষার হলে খাতা নেওয়ার ঘণ্টা পড়তে যে আর বেশি বাকি নেই। যাই যাই শ্রাবণেও তাই দক্ষিণবঙ্গে গড় বৃষ্টি ঘাটতির পরিমাণ পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি। মাঠে মাঠে ফাঁকা আমনের চষা ক্ষেত। ও দিকে বেলা বয়ে যায়। খেতের পাশে নয়ানজুলি শুকনো। পাট ছাড়ানোর জল কোথায়? সরকার থেকে কম জলে পাট পচানোর নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চাষিদের। কিন্তু মন যে মানে না নদিয়ার পাটচাষি সুরথ হালদার, প্রবীর হালদারের। তাঁরা বলেন, “হাঁটুভর জলে দাঁড়িয়ে পাট জাঁক দেওয়া আমাদের চিরকালের অভ্যাস। সে জিনিস কি আর ওইসব বিকল্প পদ্ধতিতে হয়। কিন্তু এই বৃষ্টি টানা হলে তবে খানিকটা সুরাহা হতে পারে।”
আসলে এই বৃষ্টিও খাঁটি বর্ষার নয়। নিম্নচাপের পিঠে চড়ে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকে পড়া বর্ষাতে কোনও ভাবেই ভরসা পাচ্ছেন না চাষিরা। কৃষি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জানাচ্ছেন এখন কিছুদিন বৃষ্টি হবে। তাঁদের আশ্বাস এখন কিছুদিন বৃষ্টি চলবে। বৃষ্টির মেঘভাসা আকাশ প্রকৃতই সুখবর বয়ে আনল কি না সে কথা অবশ্য সময়ই বলবে। এমনিতে কৃষি বিশ্লেষকদের মতে, বেশ কয়েক বছর ধরেই অস্বাভাবিক আবহাওয়ার মধ্যে দিয়ে চলেছে চাষাবাদ। নির্ধারিত সময়ের ঢের পরে আসাটাই যেন ক্রমশ রীতি হয়ে উঠছে। কোনও বার গোটা বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত হয়েছে সামান্য। ফলে খরার কবলে পড়েছেন চাষিরা। বিশেষ করে পাট পচানোর জল পর্যন্ত পাননি। আবার কখনও অল্প সময়ে অতি বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে মাঠের ফসল। প্রকৃতির খাম-খেয়ালিপনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গোটা দক্ষিণবঙ্গের চাষি থেকে মৎস্যজীবী সকলেই।
তবে এই প্রসঙ্গে নদিয়ার উপ কৃষি অধিকর্তা রঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, “এই সময়ে বৃষ্টি নামায় যে সব জমিতে আমন এখনই বসাতে পারেননি চাষিরা তাঁরা দ্রুত ধান বুনতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি এই জলে পাট পচানোর সমস্যা কিছুটা মিটবে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে অগস্ট মাস জুড়ে বৃষ্টি হবে।” গত দু’দিনে নদিয়ার গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫-২০ মিলিমিটার। তবে কোথাও কোথাও তা ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়েছে।
আম বাঙালির কাছে বর্ষার মানদণ্ড ঠিক হয় ইলিশ দিয়ে। তাই বৃষ্টির জলে দুনিয়ার প্লাস্টিক নর্দমার মুখে জড়ো হয়ে পাড়ার মোড়ের হাঁটু জল মাড়িয়েও ইলিশ সন্ধানে আপত্তি হয় না বাঙালির। তবে বৃষ্টি এলেও এখনও ইলিশ আসেনি। বৃষ্টির জলে রাস্তার ছাল-চামড়া, খোয়া ওঠা খানাখন্দে ভরা বড় বড় পথ পেরিয়ে ছোটাছুটিই সার।
ব্যবসায়ীরা বলছেন এ বার মাছ আসবে। হাওয়া নাকি তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গবেষকদের মতে বদলে যাওয়া আবহাওয়ায় ইলিশ বিভ্রান্ত। বর্ষার সময় বৃষ্টি নেই। জলের তাপমাত্রা, বায়ুর গতি ঠাহর করতে পারছে না ইলিশ। তার স্বভাব যাচ্ছে বদলে। কিন্তু ইলিশপ্রেমী বাঙালির স্বভাব যে মরে গেলেও বদলাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy