ফাইল চিত্র
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সিপিএম যখন কার্যত মাঠে নেমে গিয়েছে, তখন যেন অনেকটাই গুটিয়ে তৃণমূল। যদিও তাদেরই বেশি সক্রিয় হতে দেখা যাবে বলে মনে করছিলেন অনেকেই।
গত কয়েক দিনে সাংগঠনিক দুর্বলতা সামলেও বামেরা যে ভাবে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল নিয়ে পথে নেমেছে, অনেক শক্তিধর হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল তা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। সোমবার সিপিএমের প্রতিটি এরিয়া কমিটিতে নাগরিকত্ব বিল পোড়ানোর কর্মসূচি নেওায়া হয়েছিল। কুপার্স ক্যাম্পে তৃণমূলের কিছুটা নড়াচড়া অবশ্য চোখে পড়েছে।
আসানসোল থেকে শুরু হওয়া সিপিএমের ‘লং মার্চ’ এ দিনই এসে পৌঁছেছে কলকাতায়। ফলে দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ সেখানে চলে গিয়েছিলেন। তাঁরা ফিরে এসে ফের মাঠে নামবেন বলে আগাম জানিয়েও দিয়েছেন। বস্তুত, বামেদের আর হারানোর কিছু নেই। কোণঠাসা হয়ে পড়া বামেরা বরং ঘুরে দাঁড়াতে কোনও না কোনও কর্মসূচি আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে। এনআরসি নিয়ে বিক্ষোভেই তার সুবর্ণসুযোগ।
এ দিনই সিপিএমের এক জেলা নেতা বলেন, “আমরা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। কোনও ভাবেই এই বিল আমরা মেনে নেব না।” দল সূত্রের খবর, একেবারে নিচু স্তর থেকে জঙ্গি ধাঁচের আন্দোলনে যাওয়ার জন্য চাপ আসছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা চাইছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট যেন মরিয়া আন্দোলনে নামে। বিভিন্ন সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা শুরু হয়েছে তাদের এই আন্দোলনে শামিল করার জন্য। মূলত বাম ও কংগ্রেসপন্থীদের গড়া ‘আওয়াজ’ নামে অরাজনৈতিক সংগঠন সভা-সমিতির মাধ্যমে জনমত তৈরির কর্মসূচি নিতে শুরু করেছে। গত ৬ ডিসেম্বর তারা পলাশিতে প্রতিবাদ সভাও করে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলছেন, “বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আমরা আন্দোলন কর্মসূচি সংগঠিত করব। ”
কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, জেলা তৃণমূল যেন খানিকটা থমকে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে তাঁদের কী করণীয়, তা বুঝতে পারছেন না জেলা থেকে শুরু করে ব্লক বা বুথ স্তরের নেতাকর্মীরা। এখনও সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। ফলে জেলাস্তরেও কোনও কর্মসূচির ‘গাইডলাইন’ তৈরি করা যাচ্ছে না। নেতারা সব কালীঘাটের দিকে তাকিয়ে আছেন নেত্রীর নির্দেশ পাওয়ার জন্য। এমনকি নাগরিকত্ব বিল নিয়ে জেলাস্তরের নেতারাও প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। এক জেলা নেতার কথায়, “কী বলব, সেটাই তো পরিষ্কার নয়। কারণ উপর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও গাইডলাইনই পাইনি। সবচেয়ে বড় কথা, নেত্রী ছাড়া বাকি রাজ্য নেতারাও তো কিছু বলছেন না। তা হলেও না-হয় দলের অবস্থান বুঝে নিতে পারতাম।”
তৃণমূল নেতাদের একাংশের কথায়, সরাসরি না হলেও ঠারেঠোরে এখনই মুখ না-খোলার ঈঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে সংবাদমাধ্যমের কাছেও তাঁরা মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। এক জেলা নেতার কথায়, “নদিয়ার ক্ষেত্রে তো উভয় সঙ্কট। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা এলাকায় হিন্দু, বিশেষ করে মতুয়াদের সংখ্যা বেশি। আবার কৃষ্ণনগরের দিকে বেশ কয়েকটা বিধানসভা কেন্দ্র মুসলিম-প্রধান। কোনও-কোনওটায় অনুপাত আবার প্রায় সমান-সমান। ফলে অনেক সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে।”
দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার আহ্বায়ক দীপক বসু বলেন, ‘‘এ নিয়ে যা কিছু বলার, দলনেত্রী বলবেন।’’
অর্থাৎ, তৃণমূলের এমন অবস্থান নিতে হচ্ছে যখানে হিন্দু বা মুসলিম কেউই তাদের শত্রু মনে না করে। আর তবে ভারসাম্য রাখা যে সহজ হবে না সেটা বুঝতে পারছেন তৃণমূল স্তরের কর্মীরাও। সিপিএমের কিন্তু এখন এই ভারসাম্য রাখার দায় নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy