মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে তৃণমূলের বিজয় উল্লাস।১১ জুলাই ২০২৩। ছবি অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল। গত পাঁচ বছরে মুর্শিদাবাদের গঙ্গা-পদ্মা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। এই পাঁচ বছরে জেলার রাজনৈতিক মানচিত্রের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। ২০১৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে একটানা জয়ী হয়ে আসা শাসকদল মাসচারেক আগে সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে। সেখানকার বিধায়ককে দলে টেনে তৃণমূল ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্বস্তি পেল না তারা।
এ বার পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের সঙ্গে লড়াইয়ে জোর টক্কর দিয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। শাসকদল সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হলেও বাম-কংগ্রেসও খারাপ ফল করেনি। বাম-কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, ‘‘নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল সন্ত্রাস করেছে। সন্ত্রাস যেখানে রোখা সম্ভব হয়েছে, সেখানে মানুষ ভোট দিয়েছেন। যেখানে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন সেখানে আমরা ভাল ফল করেছি। অবাধ নির্বাচন হলে জেলায় তৃণমূল মুছে যেত।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, ‘‘মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পেলে বাম কংগ্রেসকে ফিরিয়ে আনবে। মানুষ যেখানে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন সেখানে আমরা জয়ী হয়েছি।’’ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘এত খুন সন্ত্রাসের পরেও ভাল ফল হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করলে তৃণমূল বাংলা থেকে মুছে যাবে।’’যা শুনে জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালন কমিটির সদস্য অশোক দাস বলেন, ‘‘সন্ত্রাস বলে চিৎকার করছিল বিরোধীরা। যদি সন্ত্রাস হত তাহলে বিরোধীরা কি এত আসনে জয়ী হতে পারত। ওরা মিথ্যাচার বন্ধ করুক।’’ জেলা তৃণমূলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘বাম কংগ্রেস বিজেপি একত্রে লড়াই করেছে। তার পরেও মানুষ দু’হাত ভরে আমাদের ভোট দিয়েছেন।’’
২০১৮ সালের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের মধ্যে মুর্শিদাবাদে সব থেকে বেশি আসনে তৃণমূল বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। সেবার রাজ্যে তৃণমূল ৩৪ শতাংশ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। মুর্শিদাবাদের পরিসংখ্যানটা ছিল ৬৪ শতাংশ। সেবার জেলা পরিষদের ৭০টি আসনের মধ্যে ৪৮টিতে শাসকদল বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। বাকি যে আসনে ভোট হয়েছিল তার মধ্যে একটিতে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল। পঞ্চায়েত সমিতির ৭৩৬টি আসনের মধ্যে ৬৯২ আসনে তৃণমূল জয়ী হয়। তার মধ্যে ৪৭২টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় (২৬টির মধ্যে ১৬টি পঞ্চায়েত সমিতি বিনা যুদ্ধে জয়) জয়ী হয়েছিল। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪,১৭০টি আসনের মধ্যে ৩,৭২০টিতে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। তার মধ্যে ২,৬৭৭টি আসনে (২৫০টির মধ্যে ১৬০টি পঞ্চায়েত বিনা যুদ্ধে জয়) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হয়।
এ বার সামান্য আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। এবারে ৭৪৮ টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের মধ্যে মাত্র চারটি আসনে এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৫৫৯৩ টি আসনের মধ্যে প্রায় ৮০ টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। বাকি সব আসনেই লড়াই হয়েছে। এবারের গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের ফলাফলে বাম কংগ্রেস জোট অনেকটাই সাফল্য পেয়েছে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২৫০ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২৪৫ টি শাসকদলের ঝুলিতে গিয়েছিল। ৫টি ছিল বিরোধীদের দখলে। এ বার ৫০টির বেশি পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতছাড়া হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy