Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

বাজার সরেছে, বিপদ জেনেও সরেনি জনতা

শুধু এর জন্যই বাজারে এসেছেন?

পারস্পরিক দূরত্ব বজায় থাকছে কোথায়? মঙ্গলবার পাত্রবাজারে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

পারস্পরিক দূরত্ব বজায় থাকছে কোথায়? মঙ্গলবার পাত্রবাজারে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০১
Share: Save:

পোস্ট অফিস মোড়ে পুলিশ দেখেই থমকে দাঁড়িয়েছিল বাইকটা। ঘুরিয়ে নেওয়ার আগেই দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেললেন এক সিভিক ভল্যান্টিয়ার।

বাইকের হ্যান্ডেলে ছোট্ট থলে। কৃষ্ণনগর শহরে বছর পঁচিশের যুবক পাত্রবাজার থেকে ফিরছেন। থলির ভিতরে সামান্য আদা আর রসুন। এটুকু কিনতেই তিনি ঘূর্ণী থেকে এসেছেন পাত্রবাজারে, যেখানে ঘূর্ণীতেই বড় বাজার আছে।

পুলিশ লাঠি ওঁচাতেই যুবক স্বীকার করে নেন, “অনেক দিন শহরের আসি না। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না। মনটা ছটফট করছিল। অনেক দিন পরে এলাম। আর আসব না। কথা দিচ্ছি।”

তাঁকে ছাড়তে না ছাড়তে বাইক নিয়ে হাজির বছর চল্লিশের আর এক জন। তিনিও ফিরছেন বাজার থেকে। থলিতে কলমি শাক, সজনে ডাঁটা। শুধু এর জন্যই বাজারে এসেছেন? ভদ্রলোক পেশায় শিক্ষক। জিভ কেটে বলেন, “আসলে সকালে বাজার যাওয়াটা দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। তাই ভাবলাম, এক পাক ঘুরে আসি।”

লকডাউনের পর থেকেই রাস্তায় ভিড় হটাতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নাকা চেকিং করছে পুলিশ। নজর রাখছে যাতে বাজারে ভিড় না হয়। পথচলতি মানুষের কাছে জানতে চাইছে, কেন ঘর থেকে বের হয়েছেন। অনেকেই তাই বাজারের থলি, কেউ বা ওষুধের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হচ্ছেন। কেউ বা স্রেফ টাটকা আনাজ আর মাছের খোঁজেও বাজার যাচ্ছেন। আর তাতেই প্রতিদিন বাজারে উপচে পড়ছে ভিড়।

সেই ভিড় ঠেকাতে জেলার বেশির ভাগ বাজার ফাঁকা মাঠে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কি লাভ হচ্ছে? আগের মতোই পাশাপাশি দাঁড়়িয়ে চলছে মাছ-আনাজের দরদাম, কেনাকাটা। মাংসের দোকানেও একই ভিড়। ক্রেতাদের বেশির ভাগেরই মুখে সস্তা গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ক।

কোথাও আবার বাজার ফাঁকা মাঠে সরিয়ে দেওয়া হলেও দু’দিন পরে সেই পুরনো জায়গায় ফিরে এসেছে। এর অন্যতম উদাহরণ কৃষ্ণনগরের গোয়াড়িবাজার। এমনতেই অত্যন্ত ঘিঞ্জি এই বাজার। আশেপাশে কোনও ফাঁকা মাঠ না থাকায় সেটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মোমিনপার্কের মাঠে। কিন্তু মাথার উপরে ছাউনি বা জল-বরফের ব্যবস্থা না থাকায় দু’দিন পরে আবার তা পুরনো জায়গায় ফিরে এসেছে। এখন সেখানে ফের ের গাদাগাদি ভিড় হচ্ছে। পাত্রবাজারের মাছের বাজার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাশে স্বীকৃতি ক্লাবের মাঠে। আর আনাজের বাজার কলেজ মাঠে। কিন্তু সেই একই দশা। পারস্পরিক দূরত্ব কেউ মানছে না।

রানাঘাটেও ভিড় এড়াতে বেশ কয়েকটি বাজারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ধানতলা থানার আড়ংঘাটা বাজার পাশে খেলার মাঠে সরানো হয়েছে। ধানতলা বাজারকে সরানো হয়েছে রাস্তার ধারে খোলা জায়গায়। রানাঘাট শহরের বেলতলা বাজার সরেছে কালীমন্দিরের পাশে। কোর্টপাড়া বাজার স্বাস্থ্যোন্নতি ময়দানে এবং নেতাজি বাজার আউটডোর হাসপাতালের মাঠে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সিংহের বাজার পাশে রাস্তার ধারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পায়রাডাঙা বাজার স্থানীয় হাইস্কুলের মাঠে এবং কুপার্স ক্যাম্প বাজার বিধান সঙ্ঘের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে কি কোনও লাভ হচ্ছে? কার্যত না। কারণ বেশির ভাগ বাজার ফাঁকা মাঠে সরিয়ে দেওয়া হলেও সেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে চলছে কেনাকাটা। পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলে যা-ও বা এক রকম শৃঙ্খলা থাকছে, সরে গেলেই ফের যে-কে-সেই।

অথচ জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের দাবি, এখনও পর্যন্ত যা অবস্থা তাতে বাজারে ভিড় এড়ানো গেলে নদিয়ায় সংক্রমণ বড় আকার না-ও নিতে পারে। এক স্বাস্থ্যকর্তার আক্ষেপ, “পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে। এই বাজারগুলো মনে হয় সেটা রাখতে দেবে না।” রানাঘাট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা পিন্টু সরকার বলেন, “বাজার ফাঁকা রাখা খুবই দরকার। আমরা নানা ভাবে তা প্রচার করছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা!” কৃষ্ণনগরের গোয়াড়িবাজার পড়ে ২২ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর অয়ন দত্ত বলছেন, “বাজার তো সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা সমস্যার কথা বলে আবার একই জায়গায় ফিরতে শুরু করেছে।”

স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, চতুর্থ সপ্তাহ শুরু হয়েছে। শিয়রে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা। কে কার সংস্পর্শে সংক্রমিত হয়েছেন সেটা আর বোঝা যাবে না, আর তখনই ঘটবে আসল বিপদ। জেলাশাসক বিভু গোয়েল অবশ্য দাবি করেন, “আস্তে আস্তে সবটাই করা হচ্ছে। বাজার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ফাঁকা মাঠে। এ বার মানুষকেও কিছুটা বুঝতে হবে।”

লকডাউন ভেঙে ঘোরাঘুরি করার অভিযোগে ইতিমধ্যেই পুলিশ ৪১ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাতেও কি হুঁশ ফিরছে?

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy