প্রতীকী ছবি
দিনমজুরের কাজ নিয়েই দু’বছর আগে মুম্বই গিয়েছিলাম। গ্রামে যে টাকা পাওয়া যায় মুম্বইয়ে তার দ্বিগুণ টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু ওই টাকা থেকেই খাওয়া ও থাকা নিজেকেই করতে হয়েছে। তাতে মাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। তবুও লাভ এই কারণেই যে, কাজের অভাব হয় না। প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায়। আমার নিজের দুই বিঘা জমি আছে, সেটা আবার আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুঁয়ে নদীর ধারে। ফলে চাষ করেও শান্তি পেতাম না। প্রতিবছর বর্ষার সময় নদীর জলে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে বাড়িতে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার চালাতে নুন আনতে ফুরনোর অবস্থার মধ্যে দিন গুজরান করতে হয়। মুম্বইয়ে গিয়ে সংসারের কিছুটা হাল ফিরেছিল। দশ দিন অন্তর তিন হাজার টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম। কোনও অভাব ছিল না।
কিন্তু লকডাউনে মনে হয়েছে আমি যে মুম্বইকে চিনি, এটা সেই মুম্বই নয়। জনতা কার্ফুর মধ্যে দিয়ে লকডাউন শুরু হওয়ার সময় আমাদের কাছে কোনও টাকা নেই। লকডাউনের প্রথম দফাতেই আলু সিদ্ধ আর ভাত খেয়েই কাটিয়েছি। আলু কেনারও টাকা ছিল না। একবার ভাত করে নুন ছড়িয়ে দু’বেলা খেয়েছি। সরকারি খাবার একবারই ঠিক মতো পেয়েছিলাম। তার পরে বলা হয়, আমাদের মতো শ্রমিকদের জন্য ওই খাবার নয়। কিন্তু লজ্জাকে দূরে ঠেকে হাতে পায়ে ধরে ওই দিন খাবার জুটেছিল। ওই ভাবেই যেখানে খাবার বিলির খবর পেতাম সেখানেই হাজির হতাম। একবেলা খেয়ে দিন কাটিয়েছি। অনেক দিন লোকের বাড়ি বাড়ি খাবার চেয়ে খেয়েছি। দশ দিন শুধু জল খেয়েই ছিলাম। আর যাই হোক ওই ভাবে বেঁচে থাকা যায় না। কাজের খোঁজে বেরিয়ে পুলিশের মারও খেয়েছি।
আমরা বুঝিয়ে বলেছিলাম, যে আমরা খেতে পাচ্ছি না, আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা তাই কাজ করতে গিয়েছিলাম। পরে আবার সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়।
গ্রামের ছেলে পুকুরে নদীতে সাঁতার শিখেছি, জলের মধ্যে ডুব দিয়ে সাঁতার কেটে জল থেকে উঠে পুলিশের হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলাম। না হলে ওই দিন যে কী হত জানি না।
বাড়ি থেকে টাকা পাঠিয়ে ছিল ওই টাকা দিয়ে ট্রাক ভাড়া করে ইদের দু’দিন পর বাড়ি ফিরেছি। আবার ফেরার সময় শুধু উত্তরপ্রদেশে ভাত খাওয়াচ্ছিল, সেখানে ভাত খেয়েছিলাম। সে দিন মনে হয়েছে কত দিন পরে ভাত খেলাম। আর কোথাও খেতে দেয়নি। বাড়ি থেকে ফোন করে কান্নাকাটি করত। ওই মুম্বইয়ে আর যাব না বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু এখানে দিন মজুরের কাজও অমিল। ফলে যেতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy