—ফাইল চিত্র।
চার বছর ধরে দিল্লিতে আছি। বেসরকারি সংস্থায় ইলেট্রিকের কাজ করি। ওই সংস্থা থেকে আমাদের থাকার জন্য ঘর দেওয়া হয়, কিন্তু খাওয়ার খরচ নিজেদের করতে হয়। এক সঙ্গে বড় একটি ঘরে বারো জন কর্মী একসঙ্গেই থাকতাম। সকলে মিলে খাবারের মেস করে ছিলাম। তাতে মাসে দু’হাজার টাকা লাগতো। খাওয়া খরচ বাদ দিয়ে ২১ হাজার টাকা উপার্জন করেছি। আমরা দুই ভাই আর এক বোন। বোনের বিয়ে হয়েছে। দাদারও বিয়ে হয়েছে, আমি এখনও বিয়ে করিনি, কারণ বিয়ে করার সাহস পাইনি। আমাদের মাত্র দুই বিঘা জমি আছে। ওই জমিতে চাষ করে সংসার চালানো সম্ভব নয়। তাই বাইরে কাজ করে দেশে ফিরে ব্যবসা করার চেষ্টাতে আছি। তাই ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া।
আমি মায়ের হাতে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা পাঠিয়ে দিই। সেটা দিয়ে মায়ের চলে যায়। করোনাভাইরাস রোধ করতে গিয়ে দেশ জুড়ে শুরু হওয়া লকডাউনে আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। কারণ আমি এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছি। বছর খানেক আগে দিল্লি গিয়েছি। আবার পুজোর সময় বাড়ি আসার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস আমাকে অনেক আগেই বাড়ি আসতে বাধ্য করেছে। সকলে মিলে নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের খোঁজ করতে যাই। সেখানে দেখি হাজার হাজার মানুষ যাঁরা আমাদের মতো যে যার বাড়ি ফিরতে চেয়ে বসে আছেন, কোন কিছুই বুঝতে পারলাম না। শেষে সকলে মিলে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।
প্রায় ৫৫ জন আমাদের রাজ্যের যাঁরা বাসে করেই বাড়ি ফিরতে রাজি। সাত হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে বাড়ি আসতে হয়েছে। আমদের মধ্যে দশ জন শুকনো খাবার নিয়েছিল। আমরা এক বোতল করে জল নিয়ে বাসে উঠেছি। রাস্তায় কিছু কিনে খেয়ে নেবো। কিন্তু রাস্তাতে কোন খাবার হোটেল খোলা ছিল না। দু’দিন জল খেয়েই কাটিয়েছি। আর যাঁদের কাছে খাবার ছিল, সেই খাবার সামান্য পরিমাণে খেতে পেয়েছি। বহু কষ্টে একটি মুদির দোকান খুঁজে চিঁড়ে আর চিনি পেয়েছিলাম। সেখানে সকলেই চিঁড়ে কিনে খেয়ে ছিলাম। কোন রাজ্য জানি না তবে তিন দিন পর প্রায় মাঝরাতে রাস্তার পাশে বাস থামল। সেখানে খিচুড়ি আর আলুর তরকারি দেওয়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ডে লুচি আর কুমড়োর তরকারি সঙ্গে মিষ্টি দিয়েছিল। আবার কলা, পাউরুটি দিয়ে ছিল বাসে খাবার জন্য। আমাদের রাজ্যের যখন বাস ঢুকলো তখন হাজার রকম প্রশ্ন করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর রাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। আর খাবারের কোন ব্যবস্থা ছিল না। প্রায় দেড় মাস ধরে বাড়িতে আছি। একদিনও কোন কাজ করতে পারিনি। সব কিছু ভালো ভাবে মিটে যাওয়ার পর দিল্লি যাবো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy