প্রতীকী ছবি।
সাগরপাড়ার নবীনগ্রামের নিখিল সরকারের দিনের অধিকাংশ সময়টাই কাটে বাসের পা-দানিতে। গলার শিরা ফুলিয়ে তীব্র হাঁকাহাঁকি করে যাত্রী তুলে, অসহ্য গরমে ঘেমেনেয়ে, একই রুটের অন্য বাস পাশে চলে এলে চালককে গালমন্দ করে, সাবধান করে— দিনান্তে যখন ঘরে ফেরেন তখন অবসন্ন শরীর আর চলে না। ভাবতেন, ‘ক’টা দিন যদি বসে খাওয়া যেত!’ দেড় মাস ধরে ঘরের দাওয়ায় বসে রোজগারহীন নিখিল বলছেন, ‘‘এর চেয়ে ওই ঝুঁকির কন্ডাক্টরিই ভাল ছিল দাদা, অন্তত দিনের শেষে পেটের ভাতটা তো জুটত!’’ কাজ করলে পারিশ্রমিক পেতেন নিখিল, দেড় মাস ধরে তাঁর কোনও রুজি নেই।
নওদার সন্ন্যাসীডাঙার নির্মল হালদার আমতলা-বহরমপুরে রুটে হেল্পার। লকডাউনে রাস্তা থেকে বাস উঠে যাওয়ায় কাজ হারিয়েছেন তিনি। নির্মল বলেন, ‘‘ভাবতে পারেন, এই বয়সে বাবার কাছে হাত পাততে হচ্ছে। বেঁচে থাকতেই ইচ্ছে করে না!’’ভোর থেকে মধ্য রাত— জেলার ভাঙাচোরা রাস্তায় প্রাণটুকু স্টিয়ারিংয়ে আঁকড়ে হাজার হাজার যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া সেই সব বেসরকারি বাস চালক-কন্ডাক্টর-খালাসিদের রুজিহীন এই দিনযাপন নিয়ে আক্ষেপ করছিলেন নওদার রথতলাপাড়ার বাস চালক নায়েব শেখ, ‘‘সবার কথা ভেবে ধর্মঘটেও বাস চালিয়েছি, আর এখন কেউ কী ভুল করেও আমাদের কথা ভাবছে!’’
মাস ঘুরে গিয়েছে, জেলার পথে বাস নেই। চালকদের দাবি, অধিকাংশ বাসকর্মীর দিন আনি, দিন খাই অবস্থা। মুর্শিদাবাদ জেলা মোটর শ্রমিক সমন্বয় কমিটির সম্পাদক জয়দেব মণ্ডল বলেন, ‘‘বাস বন্ধ। ফলে চালক-খালাসির মতো শ্রমিকদের যে প্রায় না খেতে পাওয়া অবস্থা, তা বলার নয়। কোনও কোনও বাস মালিক কিছু সাহায্য করছেন ঠিকই তবে তাতে কি সমস্যা মেটে!’’ জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল সাহা মনে করেন, ‘‘বাস চললে মালিক-শ্রমিক দু’পক্ষেরই রোজগার হয়। কিন্তু বাস না-চললে সকলের একই অবস্থা। মনে রাখবেন, সব বাস মালিকের তো সমান অবস্থা নয়, অনেকেই কিস্তিতে বাস কিনেছেন। রাস্তায় বাস না নামলে কিস্তি শোধ করবেন কী করে! তবু মালিকেরা শ্রমিকদের পাশে রয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy