Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

ভিন রাজ্যের ইটভাটা শ্রমিকদের ঘর সুদূর

বন্ধ ভাটায় আটকে পড়া তাই ভিন রাজ্যের হাজার কয়েক শ্রমিকের সামনে আশার আলো জ্বলেও নিভে গিয়েছে অচিরে।

আশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

আশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৬
Share: Save:

লকডাউন শিথিল না হলেও সরকারি বার্তায় মাঝারি শিল্প এবং কৃষিকাজে ছাড় মিলেছিল সপ্তাহখানেক আগে। প্রায় শিল্পহীন মুর্শিদাবাদ সেই আশ্বাসে ইটভাটা এবং বিড়ি শিল্পকে ঘিরে কিঞ্চিৎ স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিল ঠিকই তবে, সরকারি ফরমান মেনে ১৫ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে ভাটার আগুন জ্বলতে না জ্বলতেই ফের নিভে গিয়েছে অকালবৃষ্টির প্রকোপে। কখনও নাগাড়ে, কখনও বা ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ছাড়ের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ভাটা মালিকেরা।

বন্ধ ভাটায় আটকে পড়া তাই ভিন রাজ্যের হাজার কয়েক শ্রমিকের সামনে আশার আলো জ্বলেও নিভে গিয়েছে অচিরে। ডোমকল থেকে বহরমপুরের লাগোয়া এলাকা, নওদা থেকে জঙ্গিপুর— ভাটায় প্রায় বন্দি অবস্থায় দিন কাটানো, ঝাড়খণ্ড, বিহার কিংবা ওড়িশার ওই শ্রমিকেরা তাই ঘরে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নওদার একটি ভাটায় আটক এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘না পারছি ফিরতে, না পাচ্ছি খেতে, আমরা প্রায় বন্দি হয়ে আছি!’’ ভাটা মালিকদের একাংশ এ ব্যাপারে জেলাশাসক থেকে শ্রম দফতরে বার বার দরবার করেও অবশ্য সাড়া পাননি। তাঁদের দাবি, তাঁরা শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন বটে, কিন্তু দীর্ঘ লকডাউন পর্বে উৎপাদনহীন ভাটায় শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ওই ব্যয়ভার বহণ করা ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, লকডাউনের সময় শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে মালিকপক্ষকেই। যা শুনে মুর্শিদাবাদ জেলা ব্রিকফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল বাকি শেখ বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ মেনে নিয়েই শ্রমিকদের দেখভাল করা হচ্ছে বটে, তবে লকডাউনের মেয়াদ এমন দীর্ঘ হলে দায় সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। প্রশাসনকে সে কথা জানানো হয়েছে।’’ মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা সমস্যাটা যে আঁচ করেছেন, তা তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট— ‘‘ওঁদের আবেদন ভেবে দেখা হচ্ছে।’’ শ্রম দফতরের খবর, মুর্শিদাবাদে ৭০০ ইটভাটা রয়েছে। ভাটায় বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি বীরভূমেরও বহু শ্রমিক কাজ করেন। আটকে রয়েছেন তাঁরাও। ঝাড়খণ্ডের মহেশপুরের বিমল মৃধা, বাবলু সরেনরা তাই বলছেন, ‘‘সব হারিয়ে বসে রয়েছি, আর কত দিন ভাটা মালিকের ঘাড়ে বসে খাব, ঝাড়খণ্ডের সরকারও তো আমাদের পাসে দাঁড়াতে পারে!’’

ভাটার সংখ্যা সর্বাধিক হরিহরপাড়া ব্লকে, ৬১টি ইটভাটা রয়েছে সেখানে। প্রতি বছরের মতো এ বারও সেখানে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়, বারহাড়োয়া, রাজমহল থেকে কাজে এসে আটকে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। তাঁদের অনেকেরই ভাটা-মালিকের ব্যবহার এবং দেখভালের রকমসকম নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা ভাটায় ঘুরে তাঁদের অবস্থা দেখে সাহায্য শুরু করেছেন বটে, তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলেই অভিযোগ। ঝাড়খণ্ডের গ্রামে পরিবার ছেড়ে মাসের পর মাস ধরে পড়ে রয়েছেন নন্দলাল। বলছেন, ‘‘আমি তো না হয় দু’মুঠো খেতে পাচ্ছি। দেশের বাড়িতে হয়তো আস্ত পরিবারটাই না-খেয়ে রয়েছে।’’ ভাটায় কাজ হারিয়ে ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের অনেকেই হরিহরপাড়ার কেবলরামপুর, সারিতলা, বিহারিয়া, রুকুনপুর এলাকায় খেতের কাজ শুরু করেছেন। তা থেকেই সামান্য যা আয় হয়, তাতেই দিন গুজরান। বৃষ্টিতে মাঠঘাট ধুয়ে যাওয়ায় ভাটার কাজের পাশাপাশি মাঠের কাজও এখন থমকে গিয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস আসছে আরও বড় দুর্যোগ— আটক ভিন রাজ্যের শ্রমিকেরা বলছেন, ‘‘আর কী ঝড় অপেক্ষা করছে, কে জানে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy