পানের গতি না হলেও ফুলবাজার খুলেছে। শ্যামপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
রাজ্যের ফুল ব্যবসায়ী, বিড়ি শ্রমিক ও পান চাষিদের লকডাউন থেকে ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার পরেও দুরবস্থা কাটেনি করিমপুরের পাঁচ শতাধিক পান চাষি ও ব্যবসায়ীর।
ওই চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এলাকায় উৎপন্ন পানের নব্বই শতাংশ উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন শহরে রফতানি হয়। তাই রেল ও সড়ক পরিবহণ স্বাভাবিক না হলে সমস্যার সমাধান হবে না। পান চাষি তথা ব্যবসায়ী সমর বিশ্বাস জানান, করিমপুরে পানের উৎপাদন ও মান আগের থেকে কমে গিয়েছে। এমনিই অল্প পরিমাণ পান হাটে বিক্রি করতে আসেন চাষিরা। মাসখানেক আগে থেকেই পানের দাম ভাল ছিল না। তার উপর লকডাউনের জেরে তাঁরা চরম সমস্যায় পড়েছেন।
সারা বছর উৎপাদন হলেও এখন পানের প্রধান মরসুম। এই সময়ে বরজের সব পান এক সঙ্গে বিক্রি করে চাষিরা অনেকগুলো টাকা এক সঙ্গে পান এবং তা তাঁদের কাজে লাগে। কিন্তু যেখানে জীবনের প্রশ্ন জড়িয়ে, সেখানে কষ্ট হলেও লকডাউনকেও উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। জীবিকার আগে সবাই জীবনের চিন্তা করছেন।
করিমপুরের পান ব্যবসায়ী তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান, ব্যবসায়ীরা লাভ-ক্ষতি যা-ই হোক, ঝুঁকি নিয়ে বেশি পান কেনেন ও ভিন্ রাজ্যে বিক্রি করেন। এখানকার পান ট্রাক বোঝাই হয়ে সড়কপথে বর্ধমান, সেখান থেকে রেলপথে লখনউ, কানপুর, সীতাপুর, ফয়জাবাদ, সুলতানপুর, আকবরপুর প্রভৃতি এলাকায় বিক্রি হয়। এখন সব বন্ধ। পানের বিক্রি নেই বলে এখন অনেক হাট বসছে না। ক্রেতাও নেই। ফলে কোনও কোনও চাষি সামান্য কিছু পান করিমপুরেই বিক্রি করছেন, তা-ও খুব কম দামে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও সমস্যার কোন সমাধান হয়নি।
তাপস আরও জানান, রেল চালু না হলে সড়কপথে ট্রাকে পান পাঠানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশে পান পাঠানোর সরকারি ছাড়পত্র পেলেও সুবিধা হত। পান চাষের সঙ্গে জড়িত চাষি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সকলেই কাজ হারিয়ে চুপচাপ বাড়িতে বসে আছেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে ভাত জোটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, “মাসখানেক আগে এলাকার কয়েকটি বরজের পান কিনেছিলাম। চৈত্র মাসে সেই পান বিক্রি করার সময় ছিল। কিন্তু এখন সব পান বরজেই নষ্ট হচ্ছে। অথচ গরিব চাষিদের পানের দাম দিতে পারছিনা। উত্তরপ্রদেশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওনা টাকাও পাচ্ছি না। কী হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।”
মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙার পানচাষি বাবু শেখ জানান, বিঘাখানেক জমিতে পান চাষ করেই স্ত্রী-ছেলেমেয়ের সংসার চলে। এখন বরজ থেকে পান ছাড়িয়ে গুছিয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে শ্রমিকের খরচ উঠছে না। মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে হয়তো ফুল বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু এখানে বাজারে পানের বিক্রি নেই। রেশন থেকে চাল-আটা পেলেও তেল, ডাল, আনাজ কেনার নগদ টাকা নেই। ক্রেতা না থাকায় এক-চতুর্থাংশ দামে পান বেচতে হচ্ছে। কেউ-কেউ পান বিক্রি না-করে হাট থেকে ফিরে আসছেন। বাবু বলেন, ‘‘সরকার অন্য রাজ্যে পান পাঠানোর ব্যবস্থা না করলে না খেতে পেয়ে মরতে হবে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy