মাস্ক কিনতে ভিড়। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র।
"দাদা দু বাক্স সার্জিক্যাল..."
ক্রেতার মুখের কথাটা শেষ করতে না দিয়েই কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ের মাস্কের দোকানি বলে ওঠেন, "আর একটিও মাল নেই।" গত এক সপ্তাহ ধরে হু-হু করে বিক্রি হচ্ছে সার্জিক্যাল মাস্ক। দামও বেড়ে গিয়েছে প্রায় তিনগুণ। চাহিদা প্রচুর, কিন্তু মাল পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো। যাও বা পাওয়া যাচ্ছে, পাইকার দাম চাইছে আকাশছোঁয়া।
"এত দাম দিয়ে মাল নিয়ে এসে বেচব কত টাকায়?" বললেন কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ের মাস্কের দোকানি গণেশ মণ্ডল।
হঠাৎ এই দাম বাড়ার কারণ কী? আর বিভিন্ন মাস্কের মধ্যে সার্জিক্যাল মাস্কের চাহিদা এ ভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেল, কিছুদিন আগেও করোনা সংক্রমণ যখন প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছিল, তখন অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরতে ভুলে যাচ্ছিলেন। দোকানে দোকানে জমে গিয়েছিল মাস্কের পাহাড়। দামও কমে গিয়েছিল অনেক।
কিন্তু হঠাৎ করে মাস দেড়েক ধরে সংক্রমণ যে হারে ঝড়ের গতিতে বেড়ে চলেছে, তা আটকাতে প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যম মাস্ক পরার বিধান দিচ্ছে। আর সে কারণেই আবার বাড়তে শুরু করেছে মাস্কের বিক্রি।
বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই এই চাহিদা সব চেয়ে বেশি বাড়তে থাকে বলেও জানালেন অনেক বিক্রেতা। বিভিন্ন গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গ্রাম থেকে শহর সব জায়গার মানুষ এখন জেনে গিয়েছেন যে, ভাইরাস ঠেকাতে কাপড়ের মাস্কের তুলনায় সস্তার সার্জিক্যাল মাস্ক অনেক বেশি কার্যকরী। সে কারণেই সার্জিক্যাল মাস্কের চাহিদাটা বেশি বেড়েছে বলেও জানাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সপ্তাহখানেক ধরে সস্তার সার্জিক্যাল মাস্ক আর সস্তা নেই।
সাধারণত বাজারে তিন থেকে চার ধরনের সার্জিক্যাল মাস্ক পাওয়া যায়। একটা খুব সাধারণ, নোস পিন ছাড়া, যেগুলো ১০ টাকায় ৪ টি পাওয়া যেত। সেগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ৪ থেকে ৫ টাকায় এক একটি বিক্রি হচ্ছে। নোস পিন যুক্ত কিন্তু ব্রান্ডেড কোম্পানির তৈরি নয়, এমন সার্জিক্যাল মাস্কের বিভিন্ন মানের ৫০ টির বাক্সের খুচরো বিক্রির দাম যেখানে ছিল ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, সেই বাক্সগুলো এখন পাইকারের কাছ থেকেই ২২০ টাকা বা তার বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে জানান গণেশ-সহ অনেক বিক্রেতাই। করিমপুরের এক ওষুধের দোকানের মালিক সায়ন বিশ্বাস যেমন বললেন, "আমাদের দোকানে যে দিন ডাক্তার বসেন, সে দিন যেহেতু মাস্ক ছাড়া কাউকে ডাক্তার দেখাতে ঢুকতে দেওয়া হয় না, সে কারণে কিছু সার্জিক্যাল মাস্ক ওই দিনগুলোয় বিক্রি হত। কিন্তু দিন দশেক ধরে কিছু সচেতন ক্রেতা আসছেন সার্জিক্যাল মাস্কের বাক্সের খোঁজ করতে।" সার্জিক্যাল মাস্কের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে হাবরার মাস্ক সরবরাহকারী মৃন্ময় কুন্ডু বলেন, "চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক কোম্পানিই মাস্ক তৈরি বন্ধ রেখেছিল। হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় পুরনো স্টকের প্রায় সমস্ত মাস্ক শেষ। নতুন করে মাস্ক তৈরি হতে বেশ কিছু সময় লেগে যাচ্ছে। এই মাস্কগুলোর অনেকটাই আসে দিল্লি বা বিভিন্ন রাজ্য থেকে। দিল্লিতে লকডাউনের কারণে মাল নিয়ে আসাও সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। বিমানে আনতে তিন গুণ খরচ। এ ছাড়াও আছে শ্রমিক সমস্যা ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া।"
মূলত এ সবের কারণেই দাম হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে বলে জানালেও অনেক ক্রেতা অবশ্য অভিযোগ তুলছেন অন্য। তাঁদের অভিযোগ, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেক দোকানি বেশি করে মাল মজুত করে রেখেও কিছুটা কৃত্রিম ভাবে মূল্যবৃদ্ধি করাচ্ছেন। সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কের দাম বাড়লেও নামী সংস্থার মাস্কের দাম যে একই আছে, সে কথাও জানালেন বেশ কিছু বিক্রেতা।
কৃষ্ণনগরের এক ওষুধ বিক্রেতা সৈকত সরকার বলেন, " ৫ টা ব্র্যান্ডেড কোম্পানির সার্জিক্যাল মাস্কের যে প্যাকেট ৪০ টাকায় বিক্রি হত, তার দাম একই আছে।"
একই সুরে ডাক্তারি সরঞ্জাম বিক্রেতা দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন , "এন ৯৫, সার্জিক্যাল দুই ধরনের মাস্কই বিক্রি করলেও দামে কম হওয়ায় সার্জিক্যাল মাস্ক বেশি চলে বাজারে। আর ভাল সংস্থার সার্জিক্যাল মাস্কের ৫০টির বাক্স আমাদের কাছে আগেও ৩২৫ টাকা ছিল, এখনও তাই আছে।" তবে পর্যাপ্ত মাল না পাওয়ার কথাও মেনে নেন দীপঙ্কর।
দীপঙ্কর আরও জানান, ভোটের কাজে যাওয়ার জন্য, হাসপাতালের মতো সংক্রমিত এলাকায় যাঁরা পরিষেবা দেন বা বিভিন্ন আধিকারিকদের কাছে অবশ্য এন ৯৫ মাস্কের চাহিদা আছে। কোম্পানি ভেদে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দাম পড়ে এক একটি ব্রান্ডেড এন ৯৫ মাস্ক, জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy