ফাইল চিত্র।
চিকিৎসকরা বলছেন, সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই করোনা পরীক্ষা করাতে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে চাইলেই পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা উল্টোটাই। জেলার বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া লালারস পরীক্ষা করা হবে না। তেমন প্রেসক্রিপশন না থাকায় অনেককেই পরীক্ষা না করে ফিরে আসতে হচ্ছে।
জেলার হাসপাতালগুলি নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী পরীক্ষার ঊর্ধ্বসীমা ঠিক করে নিয়েছে। জেলা থেকেও সেই মত মোখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে পরীক্ষাকেন্দ্রের কর্মীদের দাবি। সেই মত হাসপাতালগুলিতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট (র্যাট) ও আরটিপিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদিও প্রতিদিন সব হাসপাতালে সমান ভিড় হচ্ছে না। কোনও কোনও হাসপাতালে একেবারেই ভিড় হচ্ছে না, আবার কোনও হাসপাতালে দৈনিক ঊর্ধ্বসীমার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আসছেন পরীক্ষা করাতে। সেই তালিকায় যেমন আছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল তেমনই আছে কল্যাণীর জেএনএম, রানাঘাট বা তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালও। এই সব হাসপাতালেই বেশি মানুষ আসছেন পরীক্ষা করাতে। উপসর্গ অনুযায়ী কারও র্যাট, কারও আরটিপিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে।
কিন্তু অভিযোগ উঠছে, ওই সব হাসপাতালগুলিতে পরীক্ষা করাতে গেলেই চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন দেখাতে বলা হচ্ছে। তা দেখাতে না পারলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে কৃষ্ণনগরের রেড গেট এলাকার এক পরিবারের। বাড়ির চার জনের মধ্যে দু’জনের জ্বর। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁরা শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলেন। বাড়ির কর্তা বলছেন, “আমরা জানতাম, উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করাতে বলছেন চিকিৎসকরা। তাই চার জনই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে যাই। কিন্তু চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন না থাকায় ফিরে আসতে হয়।” পরের দিন সকাল সকাল আবার ওই হাসপাতালে গিয়ে আউটডোরে ডাক্তার দেখান তাঁরা। চিকিৎসক লিখে দেওয়ার পর র্যাট পরীক্ষা করা হয়।
অনেকেই জেলা হাসপাতালের এই জাঁতাকলে পড়তে চাইছেন না। তাঁরা বিকল্প হিসাবে বেছে নিচ্ছেন আশপাশে ব্লক বা গ্রামীণ হাসপাতাল। কৃষ্ণনগরের কাছে কালীরহাটের বাসিন্দা এক ‘রেড ভলান্টিয়ার’ বলছেন, “আমার জ্বর এসেছে। কিন্তু শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে অনেক জটিলতা। ধুবুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে এলাম।” যদিও এমনটা যে হচ্ছে তা স্বীকার করতে নারাজ শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার সোমনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “এমন তো হওয়ার কথা নয়। আমার কাছে কেউ অভিযোগও করেনি। তবে কথা যখন উঠছে, খোঁজ নিয়ে দেখে সেই মত পদক্ষেপ করতে হবে।”
শুধু শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নয়, রানাঘাট ও তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালেও করোনা পরীক্ষা করাতে হলে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন চাওয়ার অলিখিত নিয়ম চালু করা হয়েছে বলে অভিযোগ। রোজ ওই দুই হাসপাতালে গিয়ে লোকে হয়রান হচ্ছে।
কেন এমনটা হচ্ছে?
ওই হাসপাতালগুলির কর্তৃপক্ষের দাবি, এক দিনে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে লালারস সংগ্রহ করলেও পরীক্ষা হবে না। রানাঘাট মহকুমা হাসপাকালের ভারপ্রাপ্ত সুপার শ্যামলকুমার পোড়ে বলছেন, “আমাদের পরীক্ষাগারের যা ক্ষমতা আর যে ক’জন কর্মী আছেন তাতে কোনও ভাবেই দিনে ১৩০টির বেশি পরীক্ষা করতে পারব না। অথচ লোক আসছে প্রচুর। চিকিৎসকের পরামর্শের ভিত্তিতে তাই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।”
কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের ক্ষেত্রে অবশ্য সমস্যা কিছুটা কম। সেখানে সাধারণের ক্ষেত্রে দৈনিক প্রায় ৬০ জনের আরটিপিসিআর পরীক্ষা করা হয়। রোজ সকাল থেকে পরীক্ষা করাতে আসা লোকেরা লাইন দেন। যত জনের পরীক্ষা হবে, লাইনে থাকা তত জনকে টোকেন দেওয়া হয়। তবে র্যাট পরীক্ষা করা হয় সারা দিন ধরেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্তমানে গোটা জেলার আরটিপিসিআর পরীক্ষা এখান থেকেই হচ্ছে। কোনও কোনও দিন ১৩০০-১৪০০ আরটিপিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে। যা তাঁদের যন্ত্র ও লোকবলের স্বাভাবিক ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ বলে জেএনএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রায়ই আমাদের ক্ষমতার দ্বিগুণ নমুনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিদিন যে বিরাট সংখ্যক মানুষ পরীক্ষা করাতে আসছেন তাঁদের সকলের পরীক্ষা একই দিনে করা সম্ভব নয়।”
নদিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কোনও কোনও বেসরকারি সংস্থা লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করছে বটে। কিন্তু তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy