Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
করোনা ঘায়ে থরহরি গ্রাম, হাসপাতালও
Coronavirus in West Bengal

কোয়রান্টিনে ডাক্তার-নার্সেরা

নদিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার-সহ ১৩ জনকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

সুস্মিত হালদার 
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২০ ০১:১৫
Share: Save:

করোনা সন্দেহভাজন চাপড়ার প্রৌঢ়কে কয়েক ঘণ্টার জন্য ভর্তি করার বড় মাসুল দিতে হল শক্তিনগর জেলা হাসপাতালকে।

নদিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার-সহ ১৩ জনকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ওই প্রৌঢ়ের চিকিৎসা হয়েছিল, তিনি তো আছেনই। জরুরি বিভাগে প্রথম যে চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করেছিলেন, তিনিও রয়েছেন তালিকায়। এ ছাড়া দু’জন ডেপুটি নার্সিং সুপার, সিস্টার ইনচার্জ, পাঁচ জন নার্সিং স্টাফ, এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং এক নিরাপত্তারক্ষীকে শুক্রবার সন্ধ্যাতেই কৃষ্ণনগর কর্মতীর্থে কোয়রান্টিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাতে জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, “ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাংদের প্রত্যেককেই চিহ্নিত করে কোয়রান্টিনে পাঠানো হচ্ছে। এই তালিকায় চিকিৎসক ও নার্স ছাড়াও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন।“ এ দিনই চাপড়ার বিডিও অনিমেষকান্তি মান্নাকে সঙ্গে নিয়ে ওই প্রৌঢ়ের গ্রামে বাড়ি-বা়ড়ি গিয়ে তাঁর সংস্পর্শে আসা মানুষজনের তালিকা তৈরি করেছেন কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক মনীশ বর্মা। শক্তিনগর হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই প্রৌঢ় যেখানে ভর্তি ছিলেন, শুক্রবার সেই মেল মেডিসিন বিভাগ থেকে সমস্ত রোগীকে সরিয়ে বিভাগটিকে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ৮ মে জ্বর গায়েই কলকাতা থেকে চাপড়ায় চলে এসেছিলেন বছর চুয়ান্নের ওই প্রৌঢ়। পরের দিন চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে গেলেও কলকাতা থেকে আসার বিষয়টি তিনি চেপে যান। তাঁকে ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরে ১৩ এপ্রিল তিনি ফের দেখাতে গেলে করোনা সন্দেহে চিকিৎসক তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে যেতে বলেন। সেখানে জরুরি বিভাগে পরীক্ষার পরে আইসোলেশন ওয়ার্ডের পরিবর্তে ভুলবশত তাঁকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় বলে স্বাস্থ্য় দফতর সূত্রের খবর। পরে ভুল বুঝতে পেরে তাঁকে প্রবল শ্বাসকষ্টের (সারি) জন্য নির্দিষ্ট গ্লোকাল হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। গ্লোকাল থেকেই তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল, রিপোর্টে জানা যায় তিনি করোনা আক্রান্ত।

এক দিন আগে যেখানে বহু চেষ্টাতেও মানুষকে ঘরবন্দি করা যাচ্ছিল না, শুক্রবার সকাল থেকে পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে চাপড়ার সেই চারাতলা গ্রামের ছবি। রাস্তাঘাট কার্যত জনশূন্য। শুধু পুলিশ, প্রশাসনের কর্তা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের আনাগোনা। এ দিনই গ্রামে স্প্রে করে সংক্রমণ মুক্ত করার কাজ শুরু হয়। স্বাস্থ্য দফতরের ২৪ জনের একটি দল বাড়ি-বাড়ি স্বাস্থ্যপরীক্ষা শুরু করেছে। তালিকা করে সন্দেহভাজনদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যেই চারাতলায় ঢোকার রাস্তা সিল করে দিয়েছিল পুলিশ। শুক্রবার থেকে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। বাইরের কেউ যাতে গ্রামে ঢুকতে বা গ্রামের কেউ যাতে বেরোতে না পারে তার ব্যবস্থা হয়েছে। সিল করে দেওয়া হয়েছে জলঙ্গি নদীর ঘাটও। পাশের ধুবুলিয়া থানার কালীনগর, সোনাতলা, পাত্রদহ, চরমহৎপুর ঘাটে নজরদারি চালানো হচ্ছে। আক্রান্তের প্রতিবেশী মতিউর রহমান বলেন, “উনি যে এতবড় একটা রোগ নিয়ে ঘরের ভিতরে সেঁধিয়ে আছেন, সেটা আমরা সেটা জানতেও পারিনি। জানলে হয়তো প্রথমেই পুলিশকে খবর দিতাম। এখন এমন হয়েছে যে কল থেকে জল আনতে যেতেও কেউ সাহস পাচ্ছে না।” এই গ্রামে কোনও বাজার নেই। তবে কয়েকটা ছোট দোকান আছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেগুলিও।

এ দিনই চাপড়ার বড় আন্দুলিয়া থেকে এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রীকে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি আক্রান্তের সঙ্গে কলকাতার খিদিরপুরে একই ঘরে থাকতেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রথমে আক্রান্তের বাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে সবাইকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটাকে বলা হচ্ছে ‘রেড জ়োন’। পরবর্তী ধাপে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত অর্থাৎ ‘অরেঞ্জ জ়োন’-এ থাকা লোকজনকে পরীক্ষা করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy