প্রতীকী ছবি
সমস্যা শুরু হয়েছিল কয়েক দিন আগেই। কৃষ্ণনগরে সারি হাসপাতালে ভর্তি দু’জনের মৃত্যুর পর তাঁদের দেহ নবদ্বীপ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হলে দাহতে বাধা দিয়েছিলেন এলাকার লোক। কোনওভাবে তাঁদের ধারণা হয়েছিল, ওই হাসপাতাল থেকে আসা যে কোনও মৃতদেহ থেকে করোনা ছড়াতে পারে।
শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক কর্তাদের উপস্থিতিতে দাহকর্য হয়, এবং নবদ্বীপ শ্মশানে সারি হাসপাতাল ও কোভিড হাসপাতাল থেকে আসা দেহ কাঠের চুল্লিতে দাহ করার আলাদা জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। তাতেও এলাকাবাসীর একাংশকে আশ্বস্ত করা যায়নি। এবং তার জন্য প্রবল সমস্যায় পড়েছেন মূলত তেহট্টের মানুষ।
কারণ, এই তেহট্টের শ্রীকৃষ্ণপুরে দিল্লি থেকে আসা একই পরিবারের ৫ জন করোনা-আক্রান্ত হওয়ায় রাতারাতি জেলার করোনা-মানচিত্রে শীর্ষে উঠে এসেছিল তেহট্ট। সেখানকার লোক শুনলে এখনও জেলার অন্য জায়গার লোকেরা একটু সন্দেহের চোখে দেখেন বা অনেকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
তেহট্টের নিজস্ব শ্মশান রয়েছে তেহট্ট ১ ব্লক অফিসের পিছনে জলঙ্গি নদীর ধারে। কিন্তু সেখানকার পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ফলে, এখানে দাহকার্য করা এক রকম অসম্ভব। বাধ্য হয়ে এলাকার মানুষকে মৃতদেহ নিয়ে যেতে হয় প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে নবদ্বীপে। কিছু ক্ষেত্রে পলাশির গঙ্গার ঘাটের শ্মশানেও যাওয়া হয়, তবে তার সংখ্যা কম।
কিন্তু এখন তেহট্টের মৃতদেহ শুনলেই নবদ্বীপের লোক আঁতকে উঠছেন এবং সেখানকার শ্মশানে তেহট্টের কোনও দেহ এলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অধিকাংশ তেহট্টবাসী। তেহট্ট-১ এর বিডিও অচ্যূতানন্দ পাঠকের কথায়, ‘‘মানুষের এই অসুবিধার কথা শুনেছি। প্রশাসনিক স্তরে কথা বলে তা মেটানোর চেষ্টা অবশ্যই হবে।’’ তেহট্টের মহকুমাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত বলেন, "এ বিষয়ে বিডিও-র সঙ্গে কথা বলে যতটা সম্ভব শ্মশানের পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা হবে।"
কিছু দিন আগে গলায় কাঁটা বিঁধে অসুস্থ হওয়ায় তেহট্ট হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বিরাট চন্দ্র রায়কে (৫৫)। হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর পরিবারের সদস্য বিশ্বজিৎ রায় জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ পাঠানো হয়েছিল কৃষ্ণনগরে। কিন্তু শ্মশানযাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না। কোনওরকমে কয়েক জনকে জড়়ো করে নবদ্বীপ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়। তখনই সকলের কাছে জানতে পারেন, তেহট্টের দেহ নবদ্বীপে সৎকারে বাধা দেওয়া হবে। শেষে ওই মৃতদেহ গ্রামের এক মাঠে সমাধি দেওয়া হয়।
স্থানীয় মানুষ এখন দাবি করছেন, অবিলম্বে তেহট্টের নিজস্ব শ্মশানের পরিকাঠামো ঠিকঠাক করে দাহ চালু করা হোক। নিয়োগ করা হোক ডোম। ২০১৬ সালে তেহট্ট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন সঞ্জয় দত্ত। তিনি জানান, সেই সময়ে রাজ্য সরকারের বৈতরণী প্রকল্পে শ্মশানের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ করা হয়নি।
শ্মশান নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে কল্যাণীতেও। এখানে কোভিড হাসপাতালের কাছে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রশাসন কয়েক দিন আগে একটি অস্থায়ী শ্মশান তৈরি করেছে মূলত করোনা-আক্রান্ত হয়ে মৃতদের দাহ করার জন্য। কিন্তু স্থানীয় অনেকে তাতে ক্ষুব্ধ, এবং তাঁরা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। কোভিড হাসপাতালও তাঁরা সরানোর দাবি করছেন। শুক্রবার গভীর রাতে কোভিড হাসপাতালে কিছু বাইরের লোক এসে ঢিল ছোঁড়ে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কোভিড হাসপাতাল ও বিশেষ শ্মশান যাঁরা চাইছেন না তাঁরাই এমন কাজ করছেন। এলাকার কাউন্সিলার সুনীল তরফদারের কথায়, ‘‘প্রশাসন প্রয়োজন মনে করেছে বলেই ওই শ্মশান তৈরি করেছে। কিছু মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাঁরা বুঝতে পারছেন না এবং অযৌক্তিক দাবি তুলছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy