প্রতীকী ছবি
দু’দিন ধরে ভীমপুরের গাঁটরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, কারও সে ভাবে করোনার লক্ষণ নেই। কিন্তু তাতেও যেন জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের উদ্বেগ কাটছে না। ওই গ্রামে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের টেস্টের রিপোর্টের অপেক্ষাই করছেন তাঁরা।
জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, গাঁটরা এলাকার বাসিন্দা ওই করোনা আক্রান্তের শরীরে সংক্রমণ কী করে ঘটল, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ফলে গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্তারা। এর উপর ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা যে ১৫ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে, তাদের কারও রিপোর্ট যদি পজিটিভ আসে, তাহলে গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রকট হয়ে উঠবে। কোনও কোনও কর্তা মনে করছেন, সে ক্ষেত্রে নদিয়া অরেঞ্জ জোন থেকে রেড জোনের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “ওই ১৫টা রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই রিপোর্টের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।”
কলকাতায় এক বেসরকারি হাসপাতালে কিডনির অস্ত্রোপচার করাতে ভর্তি হন গাঁটরার ওই বাসিন্দা। রুটিন লালারসের পরীক্ষা করাতে গিয়ে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। তদন্তে নেমে দেখা গিয়েছে যে গ্রাম ছেড়ে তিনি বের হননি। এমনকি বাইরে থেকে ফেরা কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শেও তিনি যাননি। শেষ বার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গ্রামের এক ব্যক্তির ছাদ ঢালাই করেছিলেন ১৩ দিন আগে। আবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক দিন পর তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ফলে হাসপাতাল থেকে তাঁর শরীরে সংক্রমণ হয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে। ফলে ওই ১৫ জনের রিপোর্টের দিকেই তাকিয়ে আছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্র ও শনিবার একজন করে আশাকর্মী, এএনএম, ভিলেজ রিসোর্স পার্সন ও সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে গঠিত তিনটি দল জ্বর পরীক্ষার যন্ত্র (ফিভার গান) দিয়ে গাঁটরা গ্রামের এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে পরীক্ষা করেন।
জেলার স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, যাঁদের পরীক্ষা করা হয়েছে, তাঁদের এক জনেরও শরীরে জ্বর, সর্দি-কাশির মতো কোনও উপসর্গ পাওয়া যায়নি। রবিবার থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে সমস্ত পরিবারের প্রত্যেককে একই ভাবে পরীক্ষা করার কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে গাঁটরা গ্রামের বাকি অংশের পাশাপাশি পাশের বাগবেড়িয়া গ্রামের স্কুল পাড়া, ক্লাব পাড়ার মতো বেশ কিছুটা অংশ পড়ে যাচ্ছে।
গাঁটরা গ্রামটিকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করার জন্য চারটি রাস্তাতেই বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। নজরদারি চালানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে দুটো ওয়াচ টাওয়ার। গ্রামের মানুষকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পোঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। কিন্তু তারপরও কিন্তু চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না কর্তারা। কারণ, প্রথম থেকেই চাপড়া ছিল অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। তার উপর আবার এই ব্লকেই করোনাভাইরাসের সন্ধান মেলায় অনেকেই চিন্তিত। কারণ, এই চাপড়া ব্লকে প্রচুর মানুষ বাইরের রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। লকডাউন শুরু হওয়ার সময় তাঁদের একটা বড় অংশ ফিরে এসেছেন। যাঁদের অনেকেই হোম কোয়রান্টিন মানেননি বলে অভিযোগ। আবার দিন কয়েক ধরে নতুন করে বাইরে থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরতে শুরু করেছেন। রাজস্থান, কোচবিহার থেকে ফেরা শ্রমিকদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে এই নতুন করে ফেরা শ্রমিকদের নিয়ে।
তবে শুধু চাপড়াতেই নয়, গোটা জেলাতেই নতুন করে ফিরে আসা শ্রমিকদের নিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছে প্রশাসান। আগের চেয়ে অনেক বেশি করে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। এই শ্রমিকরা ছাড়াও জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ আছে এমন রোগীদেরও খুঁজে বের করা হচ্ছে। তাঁদেরও লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে লালারস পরীক্ষার সংখ্যা। রবিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ১২৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। জেলার এক কর্তার কথায়, “বাইরে থেকে অনেকেই ফিরছেন। পাশাপাশি, এই সময় সতর্ক না হলে গোষ্ঠী সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা অনেকটাই বাড়িয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy